১৮১৩ সালের সনদ আইনের ৪৩ নং ধারা অনুযায়ী মেকলের মন্তব্য কী ছিল ?
Ans– টমাস ব্যারিংটন মেকলে ছিলেন বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্ক-এর আইন পরিষদের সদস্য ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি। ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব যখন চরমে পৌঁছোয়, তখন বড়োলাট বেন্টিঙ্ক মেকলেকে ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে GCPI বা General Committee of Public Instruction-এর সভাপতি নিযুক্ত করেন। লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮১৩ সালে সনদ আইনের ৪৩ নং ধারা অনুযায়ী মেকলে-কে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এগুলি হল –
[1] ‘সাহিত্য’ ও ‘শিক্ষা’-র সংজ্ঞা
‘সাহিত্য’ বলতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় প্রকার সাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে এবং শিক্ষিত ভারতীয় বলতে শুধুমাত্র প্রাচ্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদেরই বোঝায় না, যাঁরা জন লকের দর্শনে, মিলটনের কবিতায় ও নিউটনের পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী।
[2] শিক্ষার উদ্দেশ্য ও পাঠ্যক্রম
শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার। পাঠ্যক্রমে তাঁদেরও বোঝায়। থাকবে পাশ্চাত্য দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি।
[3] অর্থের অপচয় রোধ
প্রাচ্য শিক্ষাদানের প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। এভাবে অর্থের অপচয় বন্ধ করা যাবে এবং বেঁচে যাওয়া অর্থ প্রয়োজনীয় ইংরাজী শিক্ষার উন্নতির জন্য ব্যয় করতে হবে।
[4] শিক্ষার ভাষা-মাধ্যম
দেশীয় ভাষাসমূহ অত্যন্ত নিম্নমানের ও ঐশ্বর্যহীন। এ ভাষার শব্দ-সম্পদ ভাবপ্রকাশের এত অনুপযুক্ত যে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থসমূহ তার মাধ্যমে অনুবাদ করা যায় না।
[5] শ্রেণিবিশেষের শিক্ষাব্যবস্থা
সমস্ত জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা প্রসারের দায়িত্ব সরকারের নয়। কেবলমাত্র অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে সরকার শিক্ষিত করবেন এবং তাঁদের মাধ্যমে জনসাধারণ শিক্ষিত হবে এবং শিক্ষাক্রম শনিচের দিকে চুঁইয়ে পড়বে।
[6] বিজ্ঞানশিক্ষার প্রবর্তন
এ বিষয়ে বড়োলটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য যে বিজ্ঞানকে ভালো মনে করবেন তারই জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারেন।