প্রাচীন বৈদিক যুগে আর্য সমাজে জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ঋক বৈদিক যুগে আর্য সমাজে জাতিভেদ প্রথা ছিল না বলে যে সব ঐতিহাসিক মনে করেন তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র, এই চার বর্ণের উল্লেখ ঋকবেদের দশম মন্ডলে অন্তর্গত পুরুষ শুক্ত সূত্রে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়েছে আদি পুরুষ মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু যুগল থেকে ক্ষত্রিয়, উরুদয় থেকে বৈশ্য এবং পদযুগল থেকে শূদ্রের উদ্ভব।
প্রাচীন শুক্ত-গুলিতে যোদ্ধা ও পুরোহিতদের উল্লেখ ছিল। কিন্তু যুদ্ধ ব্যবসায়িক শ্রেণীর উল্লেখ নেই। প্রকৃতপক্ষে তাদের মতে, আর্যদের আগমনকালে তিনটি সামাজিক শ্রেণী ছিল যোদ্ধা, পুরোহিত ও সাধারণ মানুষ। পেশাও বংশানুক্রমিক ছিল না এবং তিনটি সামাজিক শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ নিযুক্তি ছিল না এমনকি পঙ্গু ভজনের ছিল না কোন টেবু (রীতি) সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা জন্য এই জাতিভেদ না থাকলেও বর্ণভেদ ছিল এবং বর্ণভেদ ছিল গাত্র বর্ণের দোতক তা জাতির সমার্থক ছিল।
![]() |
জাতিভেদ প্রথা |
কিন্তু বিরুদ্ধবাদীদের মতে, ঋক বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণের পেশা ছিল বংশগত এবং রাজন্য শব্দের উল্লেখ থেকে অনুমান করা হয় যে সে সময় অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল এক অভিজাত শাসক শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল। প্রথমত ঐতিহাসিকদের মতে, পুরোহিতকৃত পেশা ভিত্তিক কাজ ও পরিবর্তিত হতে থাকে আর্য বৈশ্যরা হয়ে ওঠে বণিক বা ভূস্বামী এবং শূদ্রদের পদোন্নতি ঘটায় তারা হয় কৃষক তবে শূদ্ররা অন্য তিন উচ্চ বর্ণের মতো দ্বিজ লাভ ও বৈদিক জাঁকজমক অধিকার পায়নি। তাছাড়া পুরুষ শুক্ত শোত্র-তে অলংকার বহুল প্রকৃতি ভাষা ব্যবহার হওয়ায় অনেক একে বাস্তব অবস্থার বিরুদ্ধে বলতে নারাজ।
ঋক বৈদিক যুগে যে কোন মানুষ ইচ্ছা ও প্রবণতা অনুসারে জীবিকা গ্রহণ ও যেকোনো শ্রেণীভুক্ত হতে পারতো। ঋক বৈদিক যুগের আদি ও মধ্য পর্বে এই বর্ণভেদ বংশানুক্রমিক হয়ে দাঁড়ায়। তবে একথাও মনে রাখা দরকার যে, স্বেতকায় আর্যরা বর্ণের মাধ্যমে কৃষ্ণকায় আর্যদের থেকে পৃথক বলে প্রতিয়মান হত।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত মতামতের সামঞ্জস্য বিধান করে বলা যায় যে, ঋকবেদের সুক্তগুলিতে জাতিভেদ প্রথার অঙ্কুর মাত্র দেখা যায় জীবিকা গ্রহণ, অর্সবর্ণ বিবাহ ও ভোজনের ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট বিধি নিষেধ ছিল না। এ যুগের শেষের দিকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু তীরের পূর্ব ভারতের সভ্যতা অগ্রসর হতে থাকলে তাদের জীবনের জটিলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পরবর্তী বৈদিক যুগে জাতিভেদ প্রথা ব্যাপক ও দৃঢ় হতে থাকে।
আরও পড়ুন ঃ