StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

শিক্ষা বিস্তারে উইলিয়াম কেরির অবদান

শিক্ষা বিস্তারে উইলিয়াম কেরির অবদান। 

Q- শিক্ষা বিস্তারে উইলিয়াম কেরির অবদান। আমাদের দেশে শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশে উইলিয়াম কেরির অবদান আলোচনা করো।

ভূমিকা:

উইলিয়াম কেরি আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসার ও সমৃদ্ধিতে এক অনবদ্য অবদান রেখেছিলেন। পাশ্চাত্যের পরিবেশে শিক্ষা-দীক্ষা পেয়েও তিনি ভারতে এসে এদেশের শিক্ষা সংস্কৃতির একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ও সাধক হিসাবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সার্বিক সরলীকরণে ও সুসংগঠনে সুবিশেষ বাংলা সাহিত্য প্রেমিকের পরিচয় রেখে গেছেন।

উইলিয়াম কেরি

[1] অধ্যাপক হিসাবে যোগদান:

১৮০১ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ভাষার অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন ও ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে সেখানে বাংলা ও সংস্কৃতের সর্বাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। তিনিই বাংলা ভাষাচর্চায়, কাব্যচর্চার অমিশ্র রূপটির উপযোগিতা অনুধাবন করে বাংলা গদ্য রচনার উদ্দেশ্য ও আদর্শকে মূর্ত করার প্রচেষ্টা করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপকগণ তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলা সাহিত্যে ও বাংলা গদ্য রচনায় নিজেদের কৃতিত্বের ছাপ রাখেন। তিনিই তদানীন্তন বাংলার সুযোগ্য লেখকগোষ্ঠীকে খুঁজে বার করে তাঁদের দিয়ে বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচনা করিয়ে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃত ভাষার প্রধান অধ্যাপক হিসাবে উপযুক্ত শিক্ষাদান ও বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচারে মনোযোগ দেন।

[2] রচনাসমূহ:

উইলিয়াম কেরির উল্লেখযোগ্য গদ্যগ্রন্থ হল- খ্রি.), ও ‘ইতিহাসমালা’ (১৮১২ খ্রি.)।’ কথোপকথন’ (১৮০১)’কথোপকথন’ গ্রন্থ আসলে বিভিন্ন শ্রেণির বাঙালির সংলাপ সংকলন। গ্রন্থটির গুরুত্ব সম্পর্কে ড. সুকুমার সেন বলেছেন “দেশের নানা অঞ্চলের নানা রকম সামাজিক বৈষয়িক ব্যাপারে উপযুক্ত কখন ভঙ্গির সহিত বিদেশী শাসকদের পরিচয় করাইবার উদ্দেশ্যে এই সংকলন।” তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ হল ‘ইতিহাসমালা’। ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থে নানা ধরনের গল্প স্থান পেয়েছে। গ্রন্থটি সাধু ভাষায় লিখিত হলেও যথেষ্ট সহজ সরল তাই বাংলা গদ্যের সাহিত্য উইলিয়াম কেরির অবদান অনস্বীকার্য। গ্রন্থটি সম্পর্কে কেরি সাহেব আম্মা ম্যান পত্রে লিখেছিলেন- “A collection stroies in the Bengali Language collected from various srouces.”

[3] আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার প্রবর্তন:

উইলিয়াম কেরি ভেবেছিলেন যে, এখানকার দেশবাসীকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে গেলে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, ব্যাকরণ, ভাষা শিক্ষার প্রাথমিক পুস্তক ইত্যাদি মুদ্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

[4] স্ত্রীশিক্ষার প্রসার:

স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরির অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয়। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশকে সামনে রেখে তিনি সকল নারীকে শিক্ষার প্রসারে অভিনব প্রচেষ্টার বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। এ-দেশে মেয়েদের শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে মেয়েদের বিদ্যালয় তৈরির কাজে নিজেকে নিযুক্ত রাখেন। তিনি মেয়েদের জন্য কতকগুলি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

[5] শ্রীরামপুরে দিনেমার কুঠি স্থাপন:

কেরি সাহেব লণ্ডনের ব্যাপটিস্ট মিশনারী সোসাইটির পক্ষ থেকে সহৃদয় ধর্মযাজক হিসেবে ১৭৯২-৯৩ খ্রিস্টাব্দে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতে আসেন। তিনি তদানীন্তন ভারত-শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অসহযোগী মনোভাবের কারণে ধর্মপ্রচারে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন ও শ্রীরামপুরে দিনেমার কুঠি স্থাপন করেন।

উপসংহার: 

সর্বোপরি বলা যায় যে, শিক্ষা বিস্তারে উইলিয়াম কেরির অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা সাহিত্যে ও বাংলা গদ্যভাষার ঘোর তমসাচ্ছন্ন ও দুর্দশাগ্র নিপীড়িত, শোষিত অবস্থার পরিবর্তন ও পরিমার্জন সাধন করে উইলিয়াম কেরি ভাষা-সাহিত্যে আলোকময় উজ্জ্বল ভাবমূর্তি এনেছিলেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *