বুদ্ধি অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করো।
Q- বুদ্ধি অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা। বুদ্ধি অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করো।
যেহেতু বুদ্ধি অভীক্ষার যথার্থ প্রয়োগের দ্বারা বুদ্ধি পরিমাপ করা যায়, সেহেতু বুদ্ধি অভীক্ষার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে। যে যে ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষার প্রয়োজন, সেই ক্ষেত্রগুলি হল
[1] বুদ্ধির নির্ভুল মান নির্ণয়:
বুদ্ধির নির্ভুল মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অর্থাৎ বুদ্ধি অভীক্ষার মান বলে দেন কোনো ব্যক্তি বুদ্ধির কোন্ স্তরভুক্ত।
[2] চাহিদা, মানসিক ক্ষমতা, অনুরাগ সম্পর্কে জানা যায়:
বুদ্ধি অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাহিদা (Needs), সাধারণ মানসিক ক্ষমতা (General Mental Ability), বিশেষ মানসিক ক্ষমতা (Special Mental Ability), অনুরাগ (Interest) প্রভৃতি জানা যায়। এগুলি সম্পর্কে জানার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কোন্ পথে চালিত করলে তাদের সঠিক জীবনাদর্শ গঠিত হবে, তা নির্ণয় করা যাবে।
[3] শিক্ষার্থীদের শ্রেণিবিন্যাসকরণ:
বিদ্যার্জনের সঙ্গে বুদ্ধির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। একই শ্রেণিতে ভিন্ন ভিন্ন স্তরের বুদ্ধ্যঙ্কযুক্ত (IQ) শিক্ষার্থীরা থাকে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বুদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্য থাকে। ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতিকে (Principle of individual differences) অনুসরণ করে বুদ্ধি অভীক্ষা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শ্রেণিবিন্যাস (classification) করে অর্থাৎ ভালো, মাঝারি এবং মন্দ এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করে শিক্ষা দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা তাদের স্মৃতিশক্তি, যুক্তিশক্তি ও চিন্তাশক্তি অনুযায়ী পঠনপাঠন করতে পারবে এবং শিক্ষা ফলপ্রসূ হবে।
(4) শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থীর ভরতি ও পাঠ্যবিষয় নির্বাচন:
শিক্ষালয়ে শিক্ষার্থী ভরতির ক্ষেত্রে এবং পাঠ্যবিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষা বিশেষভাবে কার্যকরী হয়ে থাকে। কোনো শিক্ষালয়ে কোনো শিক্ষার্থী ভরতি হওয়ার উপযুক্ত কি না সেক্ষেত্রে এবং ভরতি হওয়া শিক্ষার্থীর পাঠ্যবিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বুদ্ধি অভীক্ষা বিশেষভাবে কাজে লাগে।
[5] শিক্ষামূলক পরিচালনা:
বুদ্ধির অভীক্ষা শিক্ষামূলক পরিচালনা (Educational Guidance)-এর ক্ষেত্রে উপযোগী। শিক্ষার অভিমুখ কোন্ পথে চালিত হলে অর্থাৎ কোন শিক্ষার্থী কোন শিক্ষা গ্রহণ করলে যথার্থ বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে তার অন্যান্য বিষয়ে বিকাশ হবে, তা বুদ্ধির অভীক্ষার দ্বারা জানা যায়। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষামূলক পরিচালনা ছাড়া অনুপযোগী শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীর শ্রম ও সময় দুইই ব্যর্থ হতে পারে।
[6] বৃত্তিমূলক পরিচালনা:
বুদ্ধির অভীক্ষা, বৃত্তিমূলক পরিচালনার (Vocational Guidance) ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। কোন্ শিক্ষার্থী কোন্ বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণের উপযোগী তা বুদ্ধির অভীক্ষা দ্বারা নির্দেশিত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহ, মনের প্রকৃতি, বিশেষধর্মী মানসিক সামর্থ্য ইত্যাদি জানা আবশ্যিক। তবে বৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রয়োগ প্রাথমিক সোপান হিসেবে ব্যবহৃত হলে সুফল প্রাপ্তির সম্ভাবনা আশা করা যায়।
[7] ভবিষ্যৎ সাফল্যের নির্ধারক:
শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সাফল্যের নির্ধারক হিসেবে বুদ্ধির অভীক্ষা কাজ করে থাকে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, শিক্ষালয়ে পরীক্ষার সাফল্য এবং বুদ্ধির অভীক্ষার কৃতিত্বের মধ্যে Correlation উঁচু মানের 0.40 হতে 0.60। সুতরাং, শিক্ষার্থীর বৃদ্ধাঙ্কই বলে দেয় ওই শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় সাফল্য কীরূপ হবে।
[8] কুসংস্কার দূরীকরণে সহায়তা:
পূর্বে মানুষের মধ্যে এরূপ কুসংস্কার ছিল যে, পুরুষেরা নারী অপেক্ষা বেশি বুদ্ধিমান। এর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের পেছনের সারিতে থাকতে হত। কিন্তু বুদ্ধির অভীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, বুদ্ধির দিক থেকে বিচার করলে সাধারণভাবে নারী-পুরুষে পার্থক্য নেই।
[9] কর্মীনিয়োগ:
বর্তমানে বুদ্ধির অভীক্ষা কর্মীনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অফিস,আদালত, সেনাবিভাগ-সহ অন্যান্য বিবিধ ক্ষেত্রে কর্মীনিয়োগের কেন্দ্রে বুদ্ধির অভীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়।
[10] মানসিক বিকার সংক্রান্ত সমস্যামূলক আচরণ নির্ধারণ:
মনোবিজ্ঞানীদের মতে বুদ্ধ্যঙ্কের সঙ্গে মানসিক বিকার সংক্রান্ত সমস্যামূলক আচরণকারীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার সময় বুদ্ধির অভীক্ষা প্রয়োগ করতে হয় ।