StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

নগরায়ণের নীতি কি রোমান সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করেছিল

নগরায়ণের নীতি কি রোমান সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করেছিল?

এডওয়ার্ড সালমন বলেছেন, রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জনসংখ্যার হ্রাস, আর অতিরিক্ত নগরায়ণের ফলেই জনসংখ্যার পতন ঘটেছিল। অর্থাৎ, নগরায়ণের নীতি রোমান সাম্রাজ্যের পতন ত্বরান্বিত করেছিল। শহরগুলি রোমের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাংঘাতিকভাবে ব্যর্থ হয়। কোনো প্রদেশের সব শহর সমান মর্যাদা ও সুযোগ পেত না।

প্রিন্সিপেট প্রজাতন্ত্রের আমলের নগরের বৈচিত্র্য বজায় রাখে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়ভাবে বজায় ছিল না। প্রজাতন্ত্রের আমলে প্রদেশের অধিবাসীরা ব্যক্তিগত ভাবে রোমের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারত, গোটা সম্প্রদায় তা লাভ করত না। জুলিয়াস সিজার প্রথম এই নীতির সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন। তিনি ইটালির বাইরেও প্রদেশগুলিকে রোমান নাগরিকত্ব প্রদান করেন। প্রিন্সিপেটের সময় থেকে প্রদেশের অধিবাসীরা আরো বেশি করে রোমান নাগরিকত্ব লাভ করতে থাকে।

২১২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কারাকান্না সমগ্র সাম্রাজ্যে তা সার্বজনীন করে দেন। এই নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা থাকত। সে যেমন কর দিতে বাধ্য থাকত তেমনি প্রাদেশিক বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে সিজারের কাছে আবেদন করার সুযোগ পেত। ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রেও সে নানা সুযোগ-সুবিধা পেত। ফলে প্রদেশগুলি তাদের স্বাধীনতা হারিয়ে সম্রাটের প্রতি অনুগত হয়ে পড়ে। প্রিন্সিপেটের সময় পশ্চিমের প্রদেশগুলিকে বলা হত কলোনিয়া বা মিউনিসিপিয়াম (colonia বা municipium)

অগাস্টাস কিন্তু প্রদেশের অধিবাসীদের রোমান নাগরিকত্ব দিতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন না। তিনি জুলিয়াস সিজারের উদারনৈতিক নীতি গ্রহণ করেননি এবং প্রদেশের কোনো নাগরিককেই ম্যাজিস্ট্রেটের পদে নিয়োগ করেন নি। তবু ও তাঁর সময়ে ও তাঁর পরেও রোমান নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর কারণ বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন সেনা, প্রাক্তন গভর্নর, তাদের বংশধর, আমলা সকলেই রোমের বাইরে বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং সরকারি কর্মচারী হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রোমান নাগরিকত্ব লাভ করে। ক্রমে ইটালির বাইরে রোমান নাগরিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং রোমে জনসংখ্যা কমতে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার যখন প্রাদেশিক প্রশাসনে দখল দেওয়া শুরু করে তখনই আমলাতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের সূচনা হয়। ফলে পৌরসভাগুলির দ্রুত পতন ঘটতে থাকে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকেন্দ্রীকরণ ইটালির অর্থনৈতিক বিকাশে আরো সহায়ক হয়ে উঠতে থাকে। তবে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল, যেমন—অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক ছিল, সড়ক পথের যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যয়সাপেক্ষ ছিল, অপরিণত ব্যাঙ্ক ও ঋণ ব্যবস্থা (ক্রেডিট বা সিন্ডিকেট ছিল না), প্রযুক্তির ছবিরত্ব, অদক্ষ দাসশ্রম এবং বিশেষত প্রিপিপেটের সময় ভারতে বিপুল পরিমাণে মূল্যবান ধাতুর নির্গমন হয়ে যাওয়া। বিদেশ থেকে বিলাস-ব্যসন দ্রব্য আমদানি করার কারণ ছিল উচ্চশ্রেণির আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা। অগাস্টাস, টিবেরিয়াসের সময় পেরিয়ে ক্যালিগুলা, ক্লডিয়াস ও নেরোর সময় ক্রমে এই চাহিদা আকাশ ছোঁয়া হয়ে ওঠে। ভেসপাসিয়ান ও ট্রাজান রাজকোষের ওপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ কায়েম করলে বিলাসদ্রব্যের আমদানিতে ভাঁটা পড়ে। এদের পর থেকে ভারতে রোমান মুদ্রা আর বিশেষ পাওয়া যায়নি।

রোমান সম্রাটরা নানা জনকল্যাণমূলক কাজও করতেন, যেমন—নার্ভা ও ট্রাজান ইটালীয় অনাথ শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেন। এর জন্য রাষ্ট্র সরকারি জমি বন্ধক দিতে এবং কম সুদে ঋণ দিতে শুরু করে। পরে অ্যান্টনিনাস স্ত্রী ফস্টিনার স্মৃতির উদ্দেশ্যে সম্মান জানানোর জন্য মেয়েদেরও এই সুবিধা দেন। কিন্তু ট্রাজান, হাড্রিয়ান ও অরেলিয়াসের সময় এত যুদ্ধবিগ্রহ হয় যে কোষাগারে টান পড়ে। এঁরা সকলেই ক্রমে বাধ্যতামূলক কর প্রদানের নীতি নিয়ে জাতীয় অর্থনীতির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন। সেপ্টিমিয়াস সেভেরাসের সময় এই ব্যবস্থা গভীরতর হয়। এমনকি স্বাধীন গিল্ডগুলিকেও রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী নাগাদ এই নিয়ন্ত্রণ আরো দৃঢ় হয়।

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ক্রমেই রুগ্‌ণ হয়ে পড়তে থাকে। ডায়োকেশিয়ানের সময় থেকে সাম্রাজ্যে দু’ধরণের অর্থনীতি পাশাপাশি চলতে থাকে— সাধারণ মানুষ, সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মচারীদের জন্য ছিল অত্যাবশ্যক পণ্যের গণবণ্টন ব্যবস্থা, যা খাদ মেশানো ব্রোঞ্জ মুদ্রায় দেওয়া মজুরির অভাব পূরণ করত ও মুক্ত বাজারে অন্যান্য ছোটো ছোটো জিনিস কিনতে সাহায্য করত এবং অন্যদিকে ছিল ধনী ব্যক্তিরা, যারা ভালো সোনার মুদ্রার সুবিধা পেত, যার দ্বারা তারা সবরকম বিলাস-ব্যসনের ব্যবস্থা করতে পারত।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *