StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

অমরাবতী শিল্পের বৈশিষ্ট্য

অমরাবতী শিল্পের বৈশিষ্ট্য।

ভূমিকা :

সাতবাহন আমলের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত সে-যুগের অপূর্ব শিল্পকলা। বিন্ধা পরবর্তী অঞ্চলে, বিশেষ করে কৃষ্ণা গোদাবরী বদ্বীপ এলাকায় জগ্যাপেটা, অমরাবতী, নাগার্জুনকোন্ডা, গোলি প্রভৃতি এলাকায় দাক্ষিণাত্যের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্যের নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি থেকে এ-বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে অমরাবতী ছিল এই শিল্পের প্রধান কেন্দ্রস্থল। এই কারণে এটি অমরাবতী শিল্প এবং প্রাচীনকালে কৃষ্ণা-গোদাবরী সংলগ্ন এলাকাটি বেঙ্গি নামে পরিচিত থাকায় তা বেঙ্গিশিল্প নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। এই শিল্পের আনুমানিক সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দ থেকে খ্রিস্টীয় ৪০০ অব্দ পর্যন্ত। যেহেতু সাতবাহনদের উক্ত সময়কালের মধ্যেই পড়ে সেহেতু সাতবাহনদের শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতি বোঝার জন্য তা আলোচনা করা বাঞ্ছনীয়।

অমরাবতী শিল্পের বৈশিষ্ট্য : 

[1] অমরাবতী শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বৌদ্ধধর্ম।এই সময়কালে আর্যাবর্ত তথা বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরাংশে গন্ধার ও মথুরা শিল্পের ন্যায় অমরাবতী শিল্পকলারও মূল বিষয়বস্তু ছিল বৌদ্ধধর্ম। বুদ্ধদেব ও তাঁর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অমরাবতীর শিল্পীরা নানা ভাস্কর্যের সৃষ্টি ঘটিয়েছিলেন। নরনারীর মূর্তিকল্পনায় এখানের শিল্পীরা কিছুটা অভিনবত্ব দেখিয়েছেন। মূর্তিগুলি পেলব ও মসৃণ। প্রসঙ্গত বলা যায় নরনারীর দেহ যেমন হাত, পা, দেহকাণ্ড সব কিছুকেই দীর্ঘায়িত রূপ দেবার আপ্রাণ চেষ্টা নেওয়া হয়েছে পাথরের এই সব মূর্তিগুলিতে। দীর্ঘায়িত দেহের সঙ্গে অমরাবতীর ভাস্কররা যুক্ত করেছেন মুকুটজাতীয় শিরোভূষণ ।

[2] খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে বেশি অমরাবতী শিল্পকলার উদয় হলেও তার প্রাণবন্ত রূপ সঞ্জীবিত হয়েছিল সাতবাহন আমলে, বিশেষ করে খ্রীস্টীয় প্রথম। শতাব্দীতে। এই সময় শিল্প বিকাশের পিছনে অবশ্য কিছু অনুকূল পরিস্থিতি কাজ করেছিল। এর মধ্যে প্রধান বিষয় হল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, যার অন্যতম উৎস ছিল বাণিজ্য।
[3] শুধু বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি নয়, রাজ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরাও ধর্মীয় পুণ্যলাভের আশায় অমরাবতী শিল্প সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই সমস্ত বিষয়গুলি সাতবাহন আমলে দাক্ষিণাত্যে শিল্প সৃষ্টির উপযুক্ত প্রেক্ষাপট রচনায় সাহায্য করে এবং বৈদেশিক আক্রমণ থেকে মুক্ত এখানকার শিল্পী তথা ভাস্কররা স্বাধীনভাবে স্থাপত্য-ভাস্কর্য শিল্প সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। দাক্ষিণাত্যের উপকূল সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় বেশ কিছু পরিমাণে রোমান মুদ্রা প্রাপ্তি এই মতকে দৃঢ়তর করে। 
[4] ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে সাতবাহন যুগের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্ম সে যুগে দাক্ষিণাত্যে প্রসারিত হওয়ায় শিল্পের মধ্যে ঐ ধর্মের স্পষ্ট প্রভাব পড়েছিল। পশ্চিম ও পূর্ব দক্ষিণাত্য উভয় এলাকাতেই শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় মেলে। পশ্চিম দাক্ষিণাত্যের মধ্যে কার্লে এবং পূর্ব দাক্ষিণাত্যের মধ্যে অমরাবতী সাতবাহন আমলের শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। পাথর কেটে চৈতা ও বিহার নির্মাণের ক্ষেত্রে সাতবাহনরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। 

[5] অমরাবতীর শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অন্তত দুজন সাতবাহন শাসক যথা—বাশিষ্ঠীপুত্র পুলুমায়ি ও যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণি যুক্ত ছিলেন। তবে সাতবাহনদের কিছুকাল আগেই অমরাবতীতে স্তূপ নির্মাণের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল। সাতবাহন আমলে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে তা নতুনভাবে নির্মিত হয়। এছাড়াও অমরাবতীতে কিছু নরনারীর মূর্তি পাওয়া গেছে, যেগুলির শিল্পশৈলী ছিল উন্নত। এখানের শিল্পে প্রকৃতির পরিবর্তে মানুষকে কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করা হয়েছিল।
[6] অমরাবতী (বেঙ্গি) শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বৌদ্ধধর্মকেন্দ্রিক যে সমস্ত দৃশ্য উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলিতে একই সঙ্গে অনেকগুলি চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যগুলির মাঝখানে জায়গা বেশ কম। অনুমান করা সঙ্গত হবে যে দৃশ্যগুলিকে ঘটনাবহুল করে তোলার জন্যই ভাস্কর্যটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে আরো উল্লেখ করা যায়। যে অমরাবতীর ভাস্কর্যে রিলিফ বিশেষ করে, উঁচু রিলিফের (পটভূমি থেকে দৃশ্যাবলী ক্রমান্বয়ে উন্নত) উপস্থাপনা প্রাধান্য লাভ করেছে।

উপসংহার:

অমরাবতী ছাড়াও ঘণ্টাসালে বৌদ্ধস্তূপ নির্মিত হয়েছিল। নাসিকে তিনটি বৌদ্ধ বিহার তৈরি হয়েছিল, যা ইতিপূর্বে সেখানে প্রাপ্ত লেখ প্রসঙ্গে উল্লেখিত হয়েছে। পশ্চিম দাক্ষিণাত্যের মধ্যে কার্লেতে প্রাপ্ত এ-যুগের বিশালাকার চৈত্যটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দৈর্ঘ্যে ৪০ মিটার প্রস্থ ও উচ্চতায় উভয়ক্ষেত্রে ১৫ মিটার এবং পাহাড়ের গায়ে ১২৪ ফুট গভীরতাবিশিষ্ট এই চৈত্যটি স্থাপত্য-ভাস্কর্যের ইতিহাসে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এইভাবে সাধারণ কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন যুগে ভাষা, সাহিত্য ও শিল্প উৎকর্ষ লাভ করেছিল।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *