StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হওয়ার কারণ কি ছিল

ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হওয়ার কারণ কি ছিল। ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার কারণ।

সূচনা:

ইংল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের প্রায় সকল দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা একই ধরনের ছিল। তথাপি ফ্রান্সে কেন প্রথম এই বিপ্লব হয়? এর উত্তর নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

ঐতিহাসিক ফিসার মনে করেন ফরাসী রাজতন্ত্র সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণীর সুযোগসুবিধাগুলিকে লোপ করতে পারেনি বলেই ফরাসী দেশে প্রথম বিপ্লব হয়। তিনি মনে করেন ফরাসী রাজারা যদি সামন্ত প্রথাজনিত সামাজিক বৈষম্যকে দূর করতে পারতেন তাহলে ফ্রান্সে বিপ্লব হত না। এডমন্ড বার্ক মনে করেন ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হওয়ার কারণ দার্শনিকের প্রভাব।

দার্শনিকরা সাধারণ মানুষকে বিপ্লবী করেছিল। ঐতিহাসিক হার্নস মনে করেন বুর্জোয়ারা দার্শনিকদের রচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শাসনক্ষমতা হস্তগত করার জন্যই ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হয়।

ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হওয়ার কারণ কি ছিল।

একদল ঐতিহাসিক বিশেষ করে থিয়ার্স, মিশেল মনে করেন স্বৈরাচারী বুর্বো রাজতন্ত্রের জন্যই বিপ্লব হয়। তাদের অত্যাচার ও স্বৈরাচারকে জনগণ মেনে নিতে পারেনি। উকভিলের মতো পণ্ডিত মনে করেন ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ফ্রান্সের মধ্যবিত্ত শ্রেণী অনেক বেশী সক্রিয় ছিল এবং এখানকার কৃষকদের অবস্থা অনেক ভাল ছিল। তাই ইউরোপের অন্যান্য দেশে না হয়ে ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হয়।

পণ্ডিতদের এই বিতর্ক থেকে সরে এসে কেন ইউরোপের অন্যান্য দেশে, বিপ্লব না হয়ে ফ্রান্সে প্রথম বিপ্লব হয়।

প্রথমতঃ

টকভিলের মতো পণ্ডিতেরা যতই বলুন না। কেন ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল কিন্তু বাস্তবে তা ছিল না। ফ্রান্সের শাসকদের বিলাসিতা, আত্মঘাতী যুদ্ধনীতি, প্রশাসনিক ব্যয় আর্থিক সংকটকে তীব্র করেছিল। অভিজাত ও যাজকেরা রাষ্ট্রের অধিকাংশ জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারকে কোন কর দিত না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে কর দিতে হত। ইউরোপের অন্য কোন দেশে এ ধরনের আর্থিক অসাম্য থাকলেও ফ্রান্সে তার মাত্রা ছিল বেশি। রুটির জন্য দাঙ্গা, মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ফ্রান্সকে অস্থির করেছিল। ফ্রান্সের মত ইউরোপের আর কোন দেশে এধরনের বৈপ্লবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আর্থিক সংকটের জন্য ষোড়শ লুই জাতীয় সভার অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হন। পরিণতিতে বিপ্লব হয়।

দ্বিতীয়তঃ

ইউরোপের অন্যান্য দেশে সামন্তপ্রথা তখনও কার্যকর ছিল। সামন্ত প্রভুরা যেমন সুযোগসুবিধা ভোগ করত তেমনি কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করত। ফ্রান্সে সামন্ত প্রথা চালু থাকলেও সামন্তপ্রভুরা ছিল অপদার্থ ও দায়িত্বহীন। তারা সমাজে সুবিধা ভোগ করলেও কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করত না। মূলতঃ ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র ছিল বিপ্লবীদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য।

তৃতীয়তঃ

ফ্রান্সের সমাজের সঙ্গে ইউরোপের সমাজের পার্থক্য হল বুর্জোয়াদের প্রাধান্য। ব্যবসা বাণিজ্যের সূত্রে বুর্জোয়াদের হাতে প্রচুর অর্থ আসে। কিন্তু সমাজে তাদের কোন প্রাধান্য ছিল না। তারা পুরানো সমাজের প্রতি আস্থাশীল ছিল না। তাদের নেতৃত্বেই ফ্রান্সে বিপ্লব আরম্ভ হয়। ইংল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের আর কোন দেশে ফ্রান্সের বুর্জোয়াদের মত শ্রেণীর উদ্ভব হয়নি। তাই সেখানে বিপ্লব হয়নি।

চতুর্থতঃ

ফ্রান্সের কৃষকশ্রেণীর অবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ ভাল ছিল। ফ্রান্সের অধিকাংশ কৃষকই ছিল স্বাধীন ও মুক্ত। এমনকি তারা শিক্ষিতও ছিল। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে তারা সচেতন ছিল। সামস্ততান্ত্রিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম আরম্ভ করেছিল। ফ্রান্সের কৃষকদের এই অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থা ফরাসী দেশে বিপ্লবকে অনিবার্য করেছিল।

পঞ্চমতঃ

ইউরোপের অন্যান্য দেশে রাজতন্ত্রের থেকে ফ্রান্সের রাজতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছিল। চতুর্দশ লুই-এর মৃত্যুর পর আর কোন যোগ্য শাসক ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেননি। পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছিলেন। তারা আভ্যন্তরীণ সংকটের সমাধান করতে পারেননি। পররাষ্ট্র ক্ষেত্রেও তারা ব্যর্থ হন। অনাবশ্যকভাবে তারা যুদ্ধনীতি অনুসরণ করে ফ্রান্সের আর্থিক সংকট ও মর্যাদাকে বিনষ্ট করেন। ইউরোপের আর কোন রাজতন্ত্র দেশ ও বাইরে এত বিড়ম্বনা ভোগ করেনি।

ষষ্ঠতঃ

ফরাসী দার্শনিকেরা সমাজের অনাচার, বৈষম্য, যাজকদের ভণ্ডামী, স্বৈরতন্ত্রের ত্রুটিগুলিকে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। তাদের প্রভাবে জনগণের ক্ষোভ বিপ্লবের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। ইউরোপের অন্যান্য দেশে এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

সপ্তমতঃ

ফ্রান্সে বিপ্লবী পরিস্থিতি সৃষ্টিতে আর্থিক সংকট বিশেষভাবে কৃষিসংকট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কৃষির উন্নতিতে সরকারের কোন ভূমিকা ছিল না। কৃষিসংকটের জন্য খাদ্যদাঙ্গা শুরু হয়। কৃষিসংকটের প্রভাব শিল্পের উপর পড়ে। শিল্পশ্রমিকেরা খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে বিপদে পড়েছিল। তারাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। শ্রমিক ও কৃষকদের বিক্ষোভ সরকারের পক্ষে পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করেছিল।

উপসংহার :

উপরোক্ত পরিস্থিতির যোগফল ফরাসী বিপ্লব। ইউরোপের অন্য কোন দেশে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। কেটলবির মতে দুর্বল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, দুর্নীতিগ্রস্ত চার্চ, অভিজাতদের সুবিধা, আর্থিক সংকট, বুর্জোয়াদের আকান্তা, কৃষকদের দারিদ্রতা ফ্রান্সের বিপ্লবের কারণ। ফ্রান্সে এগুলি যে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল ইউরোপের অন্য দেশে তা হয়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top