অশোকের শিলালিপি থেকে মৌর্য সাম্রাজ্য বিষয়ে আমরা কী জানতে পারি?
ভূমিকা:
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পরবর্তী পর্যায়ে সম্রাট অশোকের নেতৃত্বে মৌর্য সাম্রাজ্য তার শীর্ষে পৌঁছে যায়। প্রথম দিককার চণ্ডাশোক বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ধর্মাশোকে পরিণত হন এবং সেইমতো তাঁর সামাজিক দায়িত্ব পালনে ব্রতী হন। অশোকের সাম্রাজ্যের মূল উপাদান হল তাঁর বিভিন্ন শিলালিপি, যা দক্ষিণের অগ্রদেশ থেকে বর্তমান পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত অবধি বিস্তৃত ছিল। পালি, প্রাকৃত, ব্রাহ্মী এবং গ্রিক খরোষ্ঠি ও অ্যারামিক ভাষায় লিখিত এই শিলালিপিগুলি অশোকের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, মৌর্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে সম্রাটের অবস্থান, ধর্মের ব্যাখ্যা ইত্যাদির মৌলিক পরিচায়ক।
অশোকের শিলালিপি থেকে মৌর্য সাম্রাজ্য বিষয়ে আমরা কী জানতে পারি।
1837 খ্রিস্টাব্দে জেমস প্রিন্সেপ (James Prinsep) অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন এবং তা ভারতের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়। গুপ্তযুগকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলার নেপথ্যে যতই ঐতিহাসিক বিতর্ক থাকুক না কেন, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, গুপ্তযুগে ভারতবর্ষের সাহিত্য, শিল্পকলা, স্থাপত্য গুণগতভাবে প্রশংসার দাবি রাখে। জনৈক ইউরোপীয় পণ্ডিতের মতে The Gupta period is in the annals of classical India almost what the Periclean Age is in the history of Greece.
সমুদ্রগুপ্ত শুধুমাত্র একজন সফল সামরিক নেতা ছিলেন না, বরং বিদ্যাচর্চার পরম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি একজন ভালো কবিও ছিলেন। গুপ্তযুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সাহিত্যের ক্ষেত্রে অভাবনীয় স্ফুরণ (literary efflorescence) যার ভিনসেন্ট স্মিথের (Vincent Smith) উক্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে – “The extraordinary intellectual vitality of the Gupta period undoubtedly was largely due to the constant and lively exchange of ideas with foreign lands in both East and West.” এর থেকে স্পষ্ট যে, গুপ্তযুগে পূর্ব ও পশ্চিম উভয়েরই চিন্তাভাবনার আদানপ্রদানের যথেষ্ট অবকাশ ছিল এবং বিদ্যোৎসাহী গুপ্ত সম্রাটরা তার যথাযথ সম্মান দিতেন।
দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের সভায় নবরত্ন পণ্ডিতেরা বিরাজ করতেন যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কালিদাস, শুদ্রক, অমর সিংহ, বসুবন্ধু, আর্যভট্ট, বরাহমিহির প্রমুখ।
কালিদাসের অন্যতম রচনাগুলির মধ্যে মেঘদূতম, অভিজ্ঞানশকুন্তলম, রঘুবংশম, কুমারসম্ভবম্, ঋতুসম্ভবম্ বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ পাশ্চাত্য পণ্ডিতমহলে বিশেষভাবে সমাদৃত। গ্যোয়েটের (Goethe ) দ্বারা মেঘদূতম-এর জার্মান অনুবাদ ইউরোপীয় পণ্ডিতদের ভারতবর্ষের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের প্রতি বিশেষ আগ্রহ তৈরি করে এবং তার সুবাদে ভারততত্ত্ব (Indology) বিভিন্ন ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও গবেষণার মূল বিষয় হয়ে ওঠে।