অগ্রহার ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো? অগ্রহার ব্যবস্থার তাৎপর্য বা গুরুত্ব কী ছিল। অগ্রহার ব্যবস্থা সম্পর্কে টীকা লেখ।
অগ্রহার ব্যবস্থা কি?
প্রাচীন ভারতে মন্দির, ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধ মঠগুলিকে এক ধরনের নিষ্কর ভূমি প্রদান করা হত ৷ কুষাণ-সাতবাহন আমল থেকে এই প্রথার সূচনা হয়। গুপ্তযুগে এই প্রথা ব্যাপকতা লাভ করে। এই প্রথা অগ্রহার নামে পরিচিত ছিল। ৩০০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে এই ব্যবস্থা ব্যাপক হয়ে ওঠে। আদি-মধ্যযুগে এই প্রথা সামন্ততন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।
অগ্রহার ব্যবস্থার তাৎপর্য বা গুরুত্ব
ব্রাহ্মণরা অগ্রহার ব্যবস্থায় বা অগ্রহার জমি ব্যবস্থা নিষ্কর ভূমি পেতেন এবং সেই সুবাদে যাবতীয় সুযোগসুবিধা ভোগ করতেন। অগ্রহার ব্যবস্থার অপর নাম বা আরেকটি নাম ছিল ভূমিদান ব্যবস্থা। ভূমিতে উৎপাদিত শস্য ছাড়া পুকুরের মাছ, কচ্ছপ ইত্যাদি তাঁদের ভোগ্যপণ্যের তালিকাভুক্ত ছিল। মাটির নীচে খনিজ সম্পদের ওপর তাঁদের মালিকানা নাও হত। মন্দিরগুলিও পর্যাপ্ত পরিমাণে জমি দান হিসেবে পেত ও তার রাজস্ব ভোগ করত। পাল আমলে বৌদ্ধ বিহারগুলি ভূমিদানের সুযোগসুবিধা ভোগ করত।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মোট 210টি গ্রাম ছিল। এই গ্রামগুলির রাজস্বের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভরণ পোষণ হত। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, ব্রাহ্মণরা এবং হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মঠগুলি সামন্ত ব্যবস্থার আওতায় আসত। পাল, প্রতিহার এবং রাষ্ট্রকূট বংশ জমিদানের মাধ্যমে তাঁদের শাসনের বৈধতা জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করত।
ইউরোপের মধ্যযুগীয় রাজবংশগুলির মতো ভারতীয় রাজারা বৃহত্তর সমাজে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকের (Royal Patrons) কাজ করত। অনেক ক্ষেত্রে সামন্তরা ছিলেন অধিক শক্তিশালী এবং নিজ এলাকার একচ্ছত্র শাসক। এই প্রবণতা একটি বিকেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার (Decentralised rule) ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।
রাজা তাঁর শাসনক্ষমতা বলবৎ করার জন্য সুবিধামতো কোনো সময় সামরিক পদক্ষেপ নিতেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ম তথা পুরোহিত শ্রেণির আশ্রয় নিতেন। শাস্ত্র মতে, রাজা ছিলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি এবং একাধারে প্রজাপালক । তাই তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করা ছিল অমার্জনীয় অপরাধ । রামপালের শাসনকালে কৈবর্ত বিদ্রোহকে সন্ধ্যাকর নন্দী তাই অনিকম ধর্মবিপ্লবম্ অর্থাৎ, অনুচিত কার্য বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মূল্যায়ন :
- রাজ্য শাসন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্ম ত্রাতার ভূমিকা পালন করে। ব্রাহ্মণ ও সামস্তশ্রেণির যৌথ প্রয়াস রাষ্ট্র ও সমাজের দুটি প্রধান স্তম্ভ হয়ে ওঠে। রাজা এবং জনসাধারণের মাঝামাঝি এই ভূমিভিত্তিক মধ্যস্থতাকারী শ্রেণি (Class of landed intermediaries) সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার (Feudal State Structure) একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল।