বাংলায় আর্যীকরণের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ লেখ অথবা টীকা লেখ।
বাংলায় আর্যীকরণ হয়েছিল সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। বাংলার আর্যদের আগমন হয়েছিল প্রাচীন পারস্য থেকে। সে সময় পারস্যে বৈদিক ধর্ম চালু ছিল। অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে মূলত আর্য-পূর্ব বাঙালি জনগোষ্ঠীর।
![]() |
Aryanization of Bengal |
আর্যদের আগমনের পর বাংলা ও বিহার অঞ্চল জুড়ে মগধ রাজ্য সংগঠিত হয় খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে। তৎকালীন বাংলা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে বা উপরাষ্ট্রে বিভক্ত ছিলো। প্রত্যেক রাষ্ট্র স্বশাসিত নৃগোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।
ধীরে ধীরে আর্য জাতি বাংলায় প্রবেশের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারও ঘটে। বসবাসের উপযোগী ভূখন্ড হিসেবে পূর্ববর্তী আর্যগণ উচ্চ-গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলসমূহ বেছে নিলেও মানব-ধর্মশাস্ত্র গ্রন্থের প্রণেতা ভূখন্ড পশ্চিম থেকে পূর্ব সমুদ্র পর্যন্ত বর্ধিত ছিল বলে বর্ণনা করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে আগত আর্যগণ নিজেদের আবাস গড়ে তোলার জন্য বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে আবাসযোগ্য পবিত্র স্থান হিসেবে গড়ে নিয়েছিল। এ প্রক্রিয়ায় আর্যদের মাধ্যমে বাংলার উচ্চ গাঙ্গেয় অঞ্চলসমূহে আর্য সংস্কৃতি প্রবেশ করে। অবশ্য নিম্নগাঙ্গেয় অঞ্চলের নদীতীরবর্তী জনগোষ্ঠীকে তারা কখনোই তাদের সংস্পর্শে আসার যোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। আর্যগণ বাংলায় বসবাস গড়ে তুললেও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে তারা নানা ধরণের বিধিনিষেধ বজায় রেখে চলতো।
পণ্ডিতদের মতে, মৌর্যযুগ থেকে য়ুয়ান চুয়াঙের আগমন কালে বাংলাদেশে আর্যপ্রভাব সম্পূর্ণতার বৃত্তে উপনীত হয়। সাধারণত ব্রাহ্মণ্যমত, বৌদ্ধ, জৈন এবং আজীবক ধর্মমতের আশ্রয়েই এদেশে আর্যধর্ম ও সংস্কৃতির প্রকাশ ও বিকাশের বিবর্তন ইতিহাস চিহ্নিত হয়।