StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা উল্লেখ করো

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা উল্লেখ করো ।

জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা / অবদান :

ভূমিকা : 

পরাধীন ভারতের সংকটময় সন্ধিক্ষণে যে সমস্ত মহাপুরুষ ধর্মের কর্মের নবজাগরণের পথে জাতীয় শিক্ষার জীর্ণতা কাটাতে স্বদেশবাসীকে মহামন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মানবমুক্তির দূত স্বামী বিবেকানন্দ | সনাতন ধর্মের প্রচারক ও স্বদেশপ্রেমের অন্যতম উদ্বোধক স্বামী বিবেকানন্দ, উপলব্ধি করেছিলেন যে পরাধীনতার নাগপাশ হতে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতেহলে চাই জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন | এটি একমাত্র গণশিক্ষা বা জাতীয় শিক্ষার হাত ধরেই আসতে পারে। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সাধক হিসেবে স্বামীজির অবদান চিরস্মরণীয়।

জীবনদর্শন :

বিবেকানন্দ তাঁর ধর্মগুরু শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসায় তাঁর জীবনবৃক্ষে নব কিশলয়ের সঞ্চায় ঘটেছিল। তাঁর শিক্ষা চিন্তায় ছিল বাস্তববাদের (Realism / materialism) পরশ, ও জাতীয়তাবাদের রসদ। তিনি পরাবিদ্যা এবং অপরাবিদ্যার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদের মধ্যে ঐক্যের কখন চেয়েছিলেন।

শিক্ষার সংজ্ঞ :

শিক্ষাগুরু স্বামী বিবেকানন্দের মতে শিক্ষা হল অন্তর্নিহিত সত্তার প্রকাশ যা মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান (“Education is the manifestation of perfection already in man”)। মানুষের মধ্যে যে পূর্ণতা বিদ্যমান তা শিক্ষার মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়।

জাতীয় অনুরাগ : 

যেহেতু মানুষের প্রকাশ ও বিকাশ সমাজকেন্দ্রিক, সেহেতু মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাজের পটভূমিতে ক্রিয়াশীল। তাই তিনি শিক্ষার মধ্য দিয়েই সমাজকে জাগিয়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন। পরাধীন ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে, জাতীয় আন্দোলনকে তরান্বিত করতে তিনি বিশেষভাবে সমাজের সক্রিয়তা চেয়েছিলেন। তিনি যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “ওঠো, জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।” দিব্যজ্ঞানের মূর্ত প্রতীক সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের মতে শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হবে চরিত্র গঠনে এবং মানুষ তৈরিতে সহায়তা করা। এই উদ্দেশ্যকে অন্যতম হাতিয়ার করে জাতীয় চেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে যেতে হবে। ইংরেজ প্রবর্তিত ‘চুইয়ে পড়া নীতি’ ভারতীয় গণশিক্ষাকে (Mass education) হত্যা করে কারণ ইংরেজরা জাতীয় শিক্ষা বিরোধী বাতাবরণ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী ছিলেন।

সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ উপলব্ধি করেছিলেন, গণশিক্ষার মাধ্যমে মানবসত্তার যথার্থ বিকাশ ঘটাতে হবে। কারণ আপাত সুখ, আকাঙ্খা চরিতার্থ করার শিক্ষা দিয়ে কুসংস্কার ভরা দেশাচারে আবর্তিত দেশবাসীকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। তাই তিনি চেয়েছিলেন মানুষ তৈরির শিক্ষা। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, “The end of all education, all training should be man-making” তাঁর মতে বাস্তববর্জিত, পুঁথিভিত্তিক, ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক চুঁইয়ে পড়া বিদেশি শিক্ষার অসাড়তায় মানুষ তৈরি হয় না। মানুষ গড়ার জন্য চাই বাস্তবসম্মত, দেশজ ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ধর্মকেন্দ্রিক গণশিক্ষা। গণশিক্ষা, গণসচেতনতা গড়ার অন্যতম হাতিয়ার। এই সচেতনতায় সমৃদ্ধ মানুষেরাই কুসংস্কারমুক্ত দেশ গড়ে দিতে পারে। তাই স্বামীজি গণশিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

দেশপ্রেমিক কর্মযোগী সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ভারত মাতৃকার বেদিমূলে আশ্রিত সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থেকে মৈত্রীয় কখনে আবদ্ধ হতে বলেছেন। তিনি মনে করতেন মানবধর্মে উদ্দীপিত হয়ে ভারতবাসী জাতীয় শিক্ষা চেতনাকে সমৃদ্ধ ও মহিমান্বিত করে তুলবে।

স্বামীজি জাতীয় উন্নয়নের এবং জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে, পুরুষদের মতো নারীশিক্ষাতেও সমান গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “There is no hope of rise for that family or Country where there is no eudcation of women, where they live in sadness. For this reason they have to rise first.” অর্থাৎ, যে পরিবারে বা দেশে নারীদের কোনো শিক্ষা নাই এবং যেখানে তারা দুঃখের মধ্যে বাস করে, সেই পরিবারের বা দেশের উন্নয়নের আশা নাই। সেই জন্য প্রথমে তাদের তুলে ধরতে হবে কারণ, নারীশক্তির বিকাশই হল জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার।

ব্রহ্মজ্ঞ সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষকদের ত্যাগের কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে শিক্ষক হবেন ত্যাগী, চিত্তসংযমী, স্নেহপ্রবণ, পবিত্র মনের অধিকারী। তাঁর ভাষায়, “Tyagi can be a good teacher. A teacher must be dedicated to his profession and teach with devotion and purity of mind and heart. ” জাতীয় শিক্ষার উত্তরণে এবং জাতীয় শিক্ষার আন্দোলনে প্রয়োজন শিক্ষকের ত্যাগ, চিত্তসংযম, নিঃস্বার্থপরতা, উৎসর্গীকৃত মনোভাব প্রভৃতি। তাই কর্মযোগী স্বামীজি শিক্ষকের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিবেকানন্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁর চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, আর এর মধ্য দিয়েই তিনি ভারতের জাতীয় শিক্ষার প্রসারে এবং জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে এক মহান পথিকৃৎ হিসেবে অবদান রেখে গেছেন।

  • উপসংহার :

  • তেজোদৃপ্ত বৈদান্তিক সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ জাতীয় শিক্ষার সংস্কার, প্রসার ও আন্দোলনকল্পে যে বীজ বপন করে গেছেন, সেই বীজের ফসল, “মুর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী” ভোগ করছে, ফলে কামিনী কাঞ্চনত্যাগী ওই সন্ন্যাসী প্রদত্ত মহাজাগরণের মহামন্ত্র মানুষ চিরকাল স্মরণ করবে এবং গ্রহণ করবে। জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সাধক হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা চিরস্মরণীয়।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *