StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

কার্ল মার্কসের প্রাচ্যদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

কার্ল মার্কসের প্রাচ্যদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । কার্ল মার্কসের প্রাচ্যদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা

  • ভূমিকা : 

  • আদি-মধ্যযুগের ধারণা ভারতবর্ষের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে আত্মপ্রকাশ করে। সর্বভারতীয় ইতিহাস সম্মেলনের (All India History Congress) জয়পুর এবং নাগপুর অধিবেশনে যথাক্রমে এই তত্ত্বের আবরণ উন্মোচন হয়। এটি প্রাচীন ও মধ্যযুগের অন্তর্বর্তী সময় যাকে ‘যুগসন্ধিক্ষণ‘ (Transition) হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

কার্ল মার্কসের প্রাচ্যদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থা :

মূলত মার্কসীয় ভাবধারার ঐতিহাসিকেরা আদি-মধ্যযুগের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা নিয়েছেন। দ্রষ্টব্য বিষয় হল যে, এই পর্বের ইতিহাসে ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশের কথা উল্লিখিত আছে। সর্বপ্রথম ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর গ্রন্থ ‘Dialectics of Land Economics in India’-তে ভারতীয় ভূমিব্যবস্থার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং রুশ বিপ্লে পুরোধা স্বয়ং লেনিন ভূপেন্দ্রনাথের ব্যাখ্যাকে ঔপনিবেশিক অর্থনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করেন। 

ভারতীয় ঐতিহাসিকদের মধ্যে ডি ডি কোসাম্বী (DD Kosambi ), রোমিলা থাপার (Romilla Thapar), আর এস শর্মা ( R S Sharma), ডি এন ঝা (D N Jha), ডি এন এস যাদব (BN S Yadav) এবং জাপানি ঐতিহাসিক নোবুরু কারাশিমা (Noburu Karashima) ভারতীয় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্গত আর্থসামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ করেছেন এবং ইউরোপীয় সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার ধাঁচে তার সাদৃশ্য অনুসন্ধান করেছেন।

এই বিতর্ক মুখ্যত কার্ল মার্কসের প্রাচ্যদেশীয় উৎপাদন ব্যবস্থার (Asiatic Mode of Production) ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে আরম্ভ হয়। মার্কসের মতানুযায়ী ভারতবর্ষ এবং অন্যান্য প্রাচ্য দেশগুলির (চিন, পারসা ইত্যাদি) সমাজব্যবস্থা ছিল গ্রামভিত্তিক। গ্রামগুলি ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সেখানে কোনো পণ্য উৎপাদন হত না। গ্রামের দৈনন্দিন চাহিদাগুলি সেখানকার কারিগরেরা তাদের শ্রম দিয়ে পূরণ করত এবং তার বিনিময়ে উৎপাদিত শস্যের একাংশ পেত। 

সমস্ত বেচাকেনা হত বিনিময় প্রথার (Barter System) মাধ্যমে। কোনো প্রকার বাণিজ্যের ব্যবস্থা ছিল না। মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল না। পণ্য উৎপাদন হত না, তাই বাজার অর্থনীতির ধারণা ছিল না। এমতাবস্থায় নগরায়ণ ঘটেনি ও শিল্পায়নের অস্তিত্ব ছিল না। এই স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র।

রাষ্ট্র কৃষকদের ওপর কর (নিয়মিত এবং অনিয়মিত) চাপিয়ে সামাজিক উদবৃত্ত (Social Surplus) আহরণ করত এবং বৃহৎ সেচ ব্যবস্থার (Elaborate Irrigation Networks) মাধ্যমে কৃষিকাজে সাহায্য করত। এই প্রাচ্যদেশীয় উৎপীড়নমূলক যথেচ্ছাচারবাদী রাষ্ট্রকে (Oriental Despotic State) নিয়ন্ত্রণ করত একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র, যারা কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত শস্যের ভিত্তিতে কর সংগ্রহ করতেন এবং রাষ্ট্রের প্রদত্ত ভূমির সিংহভাগ ভোগ করতেন। 

জার্মান সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল উইটফোগেল (Karl Wittfogel) এদের Hydraulic Bureaucracy’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্রের (Agrarian State) চরিত্র ছিল সামন্ততান্ত্রিক (Feudal)। এই আমলাগণ সামন্ত, মহাসামন্ত, মহারাজা, রাজাধিরাজ বলে অভিহিত হতেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *