StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ইউরোপে রোমান্টিক পর্যায়ের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জার্মান লেখকদের অবদান আলোচনা করো

ইউরোপে রোমান্টিক পর্যায়-এর ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জার্মান লেখকদের অবদান আলোচনা করো।

ইউরোপে রোমান্টিক আন্দোলন (Romantic Movement), জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ইতিহাস চিন্তা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অষ্টাদশ শতকের শেষে এবং ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় ইউরোপের চিন্তাজগতে রোমান্টিক ভাবধারায় উম্মেষ এবং বিকাশ ঘটে। এখানে যুক্তি ও বুদ্ধির জায়গায় স্বতঃস্ফূর্ততা (Spontaneity) ও অনুভূতিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিল্পবিপ্লবজনিত পুঁজিবাদী  এবং বুর্জোয়াকেন্দ্রিক বৈষয়িক মানসিকতা থেকে সহজ-সরল জীবনযাপনের দর্শন ও মানুষের মুক্তির প্রচেষ্টা প্রাধান্য পায়। এছাড়া বুদ্ধি-বিভাসাজনিত অতি বৈজ্ঞানিক (Ultra Scientific) দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায় রূপকথা ও চিরাচরিত ঐতিহ্য মানুষের সুদূর ও কাল্পনিক অতীতকে আহ্বান করতে সাহায্য করে। এই কাল্পনিক অতীত (Imagined past) সমৃদ্ধ ইতিহাস তৎকালীন ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রধান পাথেয় হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্লাভ জাতি (Slav) অধ্যুষিত দেশসমূহে চিত্রকলা, স্থাপত্য, দর্শন এবং সাহিত্যে এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ব্রিটেনে কিটস (Keats), শেলী (Shelley), বায়রন ( Byron), ওয়াল্টার স্কট (Walter Scott); ফ্রান্সে ভিক্টর হুগো (Victor Hugo), আলেকজান্ডার ডুমা (Alexander Dumas); জার্মানিতে ফিক্টে (Fichte), শ্লেগেল (Schlegel), নোভালিস (Novalis), গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় (Grimm Brothers), রিচার্ড ভাগনার (Richard Wagner) ইতালিতে আলেসান্ড্রো মানজোনি (Alessandro Monzonni), জিয়াকোমো লিওপার্ড (Giacomo Leopardi), কার্লো পোর্তা (Carlo Porta), রুশ দেশে গোগোল (Gogol ), গনিত (Turgenev) এবং দস্তয়ভস্কি (Dosteovsky) তাঁদের আবেগপূর্ণ ও অনবদ্য কৃষ্টির দ্বারা মানবমনকে সমৃদ্ধ করেছেন। জার্মানিতে নেপোলিয়নের যুগে রোমান্টিকতা পরিপূর্ণতা লাভ করে। এক্ষেত্রে শ্লেগেল ও নোভালিসের সর্বাধিক অবদান লক্ষণীয়।

ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র এবং অধ্যাপকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ দেখা দেয়। CE 1813 এবং CE 1817-তে তাঁরা অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে লিপজিগের যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় এবং মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে জার্মানির ধর্মসংস্কার আন্দোলনের তিনশ বছর উদযাপন করেন। এর ফলে কার্লসর্বাড আদেশনামার (Carlesbad Decrees) দ্বারা চ্যান্সেলার মেটারনিখ (Metternich) এই জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপকে দমন করতে উদ্যত হন।

কিন্তু জার্মান জাতীয়তাবাদের অপ্রতিহত ধারাকে বাঁধ দেওয়ার প্রচেষ্টা বিফলে যায়। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং এক জাতি এক রাষ্ট্রের ধারণা সমার্থক হয়ে ওঠে। জার্মানিতে এই এক জাতি (volk) ধারণার মূল প্রবর্তক ছিলেন জোহান গটফ্রিড হার্ডার (Johann Gottfried Herder, CE 1741-1803)। হার্ডারের দার্শনিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি জার্মানদের মধ্যে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করে।

হার্ডারের মতে সমস্ত জাতির আত্মা তাঁদের নির্দিষ্ট ভাষার মধ্যে বিদ্যমান (Each nation could only have one language as the true expression of its soul) এবং জার্মানগণ এর ঊর্ধ্বে নন। এ ছাড়া তিনি বলেন যে প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ‘ব্যক্তিত্ব’ (Personality) আছে এবং ভাষার মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। তাঁর মতানুসারে, “without its own language a volk is an absurdity ” মানবজাতির চরিত্র তার ভাষার মধ্যে নিহিত এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা সেই সভ্যতার ধারক ও বাহক। তাই ভাষার তাৎপর্য অপরিসীম।

হার্ভার সমগ্র মানবজাতির ভাষাভিত্তিক বিভাজন করেন এবং প্রত্যেকটি সভ্যতাকে তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত অনুযায়ী বিচার্য বলে গণ্য করেন। হার্ভারের মতে জাতির প্রাণশক্তি (Volk Geist) তার বেঁচে থাকার প্রধান উৎস।

ইতিহাস সংক্রান্ত হার্ডারের উল্লেখযোগ্য দুটি রচনা হল (১) One More Philosophy of History (CE 1774) এবং (২) চার খণ্ডে প্রকাশিত Ideas for the Philosophy of the History of Mankind (CE 1784 1791)। ঐতিহাসিক কলিংউড (Collingwood) – এর মতে হার্ডারের তত্ত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় কারণ তা পরবর্তী পর্যায়ে জাতিভিত্তিক বর্ণবিদ্বেষী (Racial Hatred) চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়। ইউরোপে রোমান্টিক পর্যায়-এর ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে জার্মান লেখকদের অবদান অনস্বীকার্য।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *