StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

বুদ্ধি-বিভাসা কীভাবে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপে ইতিহাস রচনাকে প্রভাবিত করেছিল

 

বুদ্ধি-বিভাসা কীভাবে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপে ইতিহাস রচনাকে প্রভাবিত করেছিল? 

অষ্টাদশ শতক ছিল ইউরোপে বুদ্ধি-বিভাসার যুগ (Age of Enlightenment)। ইউরোপের ইতিহাসের এই পর্বকে যুক্তিবাদের যুগ অথবা Age of Reason বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞান বিপ্লবের আনুকূল্যে এবং রেনেসাঁস ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে মানুষ ক্রমশ শিক্ষিত হয় এবং প্রগতিশীল মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে সে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোর দিকে অগ্রসর হয় (From darkness to light)। ফরাসি, জার্মান, ইংরেজ এবং স্কটিশ বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের নিরিখে প্রচলিত সামাজিক ধ্যানধারণা, মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রভাবনা, কুসংস্কার ইত্যাদির কঠোর সমালোচনা করেন এবং প্রয়োজনে এগুলির মূলোৎপাটনের কথা বলেন। ফরাসি দার্শনিকগণ সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বুদ্ধি-বিভাসার প্রভাব এবং অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কার কতকগুলি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
  • ১. প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিরোধিতা: এই যুগে ধর্মকে মধ্যযুগীয় বর্বরতার অবশিষ্ট প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং যাজকতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতা ও শঠতার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করা হয়। ধর্মকে প্রগতিবিরোধী (Regressive) আখ্যা দেওয়া হয়। ভলতেয়ার (Voltaire), মন্তেস্কু (Montesquieu), রুশো (Rousseau), দিদেরো (Diderot), হিউম (Hume), গিবন (Gibbon) প্রমুখ চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও ঐতিহাসিকদের রচনায় এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ভলতেয়ার (CE 1694-1778) ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হওয়া সত্ত্বেও গির্জার গোঁড়ামি ও দুর্নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে গির্জার সমস্ত বিশেষ অধিকার (Prerogatives) হরণ করা হয় এবং ধর্মযাজকদের রাষ্ট্রের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে বহুকাল যাবৎ ফরাসি রাষ্ট্র এবং গির্জার মধ্যে টানাপোড়েন অব্যাহত থাকে যা অবশেষে CE 1801-তে নেপোলিয়ানের তৎপরতায় স্তিমিত হয়।
  • ২. উক্ত সময়ের ইতিহাস তার চিরাচরিত অদৃষ্টবাদী (Fatalist) আখ্যান (Narrative) থেকে বিচ্যুত হয়ে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং ইতিহাসের দর্শন (Philosophy of History) একটি নতুন চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। এটি সম্ভবত গ্রিক দার্শনিক ডাইয়োনিসিয়াসের (Dionisyus) ইতিহাস সম্পর্কিত আপ্তবাক্য থেকে উদ্ধৃত এবং অনুপ্রাণিত— History is Philosophy teaching by examples উপরন্তু ইতিহাস যেহেতু মানবকেন্দ্রিক কার্যকলাপের দিশারি, সেহেতু সংকীর্ণ ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে সে বৃহত্তর মনুষ্য জাতির কথা বলে এবং বিশ্ব ইতিহাস (Universal History) পরিক্রমার ওপর গুরত্ব আরোপ করে।
  • ৩. মানবমন (Human Mind) পাশ্চাত্য ইতিহাসবীক্ষণ এবং রচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। ভলতেয়ার তাঁর সাত খন্ড বিশিষ্ট প্রবন্ধাবলি (Essays) এই উদ্দেশ্যে রচনা করেছিলেন। বসুয়ে-র (Bossuet) সংকীর্ণ ইউরোপকেন্দ্রিক এবং খ্রিস্টধর্ম ভিত্তিক ভাবধারার প্রতিবাদ করে ভলতেয়ার তাঁর প্রবন্ধাবলির একটি দীর্ঘ ভূমিকায় চিন, পারস্য, আরব, ভারতবর্ষ এবং প্রাচীন মেসোপোটেমিয়ার সমৃদ্ধ সভ্যতাগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি আরব জাতির বিজ্ঞানসাধনা এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেছেন। মধ্যযুগীয় গির্জা, ধর্ম, শাসক ইত্যাদির প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছেন। একটি সুস্থ, শিক্ষিত, যুক্তিনির্ভর ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে ভলতেয়ার ইতিহাসচর্চার অপরিহার্যতার কথা বলেন। ইতিহাসের যথোপযুক্ত বীক্ষণ ব্যাধিগ্রস্ত মানবজীবনে পথ্যের কাজ করে।

  • মূল্যায়ন :

  • এডওয়ার্ড গিবন (Edward Gibbon, CE 1737-1794) তাঁর অনবদ্য ছয় খণ্ড বিশিষ্ট রচনা “The Decline and Fall of the Roman Empire (CE 1776 ) গ্রন্থে ভলতেয়ার-এর অনুরূপ মত পোষণ করেছেন এবং রোম সাম্রাজ্য পতনের নেপথ্যে খ্রিস্টধর্মীদের অবাঞ্ছিত কার্যকলাপকে মূলত দায়ী করেছেন। এ ছাড়া তিনি রোমান ক্যাথলিক গির্জার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *