দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্বের মূল্যায়ন আলোচনা কর। দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্বের মূল্যায়ন ।
দ্বিতীয় পুলকেশীর শাসনকাল (আঃ ৬১০-৪২ খ্রিঃ) ছিল ঘটনাবহুল এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই । প্রথমত, পিষ্টপুর (গোদাবরী জেলার পিঠপুরম) ও সংলগ্ন অঞ্চলকে কেন্দ্র করে তিনি বেঙ্গীর পূর্ব চালুক্য নামে একটি নতুন বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার শাসনভার অর্পিত হয়েছিল তাঁর ভাই কুব্জ বিষ্ণুবর্ধনের ওপর। বলাবাহুল্য, এর মাধ্যমে অনুগত ভাই-এর প্রতি তিনি যথোচিত ব্যবহার করেছিলেন।
দ্বিতীয়ত, উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে হর্ষবর্ধনের মতো শক্তিশালী শাসককে তিনি পরাভূত করেছিলেন। এর ফলে বাদামির চালুক্য বংশের গৌরব বৃদ্ধি পেয়েছিল।
তৃতীয়ত, তাঁর শাসনকালেই তুঙ্গভদ্রার দক্ষিণে চালুক্য রাজ্যের অধিকার সম্প্রসারণের প্রশ্নে দীর্ঘস্থায়ী চালুক্য-পল্লব প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছিল এবং প্রকট রূপ ধারণ করেছিল। সর্বোপরি, সমকালীন পারস্যের সঙ্গে তাঁর কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় ছিল। উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক তবরীর বিবরণ থেকে জানা যায় যে পারস্যের শাসক দ্বিতীয় খসরুর রাজত্বের ৩৬তম বর্ষে (৬২৫-২৬ খ্রিঃ) দ্বিতীয় পুলকেশী তাঁর কাছে একটি দূত পাঠিয়েছিলেন। অনুমান করা হয় যে এর প্রত্যুত্তরে দ্বিতীয় খসরুও পুলকেশীকে দূত পাঠিয়ে ছিলেন।
একথা অনস্বীকার্য যে দ্বিতীয় পুলকেশী সিংহাসনে বসেছিলেন চালুক্য রাজবংশের এক জটিল রাজনৈতিক আবর্তের মধ্যে (পিতৃব্য মঙ্গলেশের হত্যার মধ্য দিয়ে)। আবার তাঁর মৃত্যুর পরেও চালুক্য রাজবংশ এক কঠিন সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। এতদসত্ত্বেও তাঁর রাজত্বকাল চালুক্য বংশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল স্থান অধিকার করে আছে।
সংগ্রামের মধ্যে হার-জিত আছে, এই সত্য দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। কখনও তিনি হর্ষবর্ধনের মতো প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বকে এবং পল্লবরাজ মহেন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করেছিলেন। আবার মহেন্দ্রবর্মণের পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মণের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করে চূড়ান্তভাবে পরাভূত হয়েছিলেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার তিনি ছিলেন পূর্ণমাত্রায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
সাম্রাজ্যের সর্বাঙ্গীণ উন্নতিসাধন করাই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ও মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাঁর একাধিক পুত্র থাকা সত্ত্বেও অনুগত ভাই বিষ্ণুবর্ধনের ওপর বেঙ্গীর চালুক্য বংশের দায়িত্বভার অর্পণ করার মধ্যে তাঁর উদারতার পরিচয় মেলে। তাঁর আমলেই চালুক্য সাম্রাজ্য সর্বাধিক বিস্তৃতি লাভ করে। তাঁকে যে দক্ষিণ ভারতের আদি মধ্য যুগের মহত্তম শাসকদের মধ্যে অন্যতম বলা হয়ে থাকে তা মিথ্যা নয়।