দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব আলোচনা কর । দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব পর্যালোচনা করো । দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব ।
ভূমিকা :
বস্তুতপক্ষে বাদামির চালুক্য বংশের ইতিহাসে মহারাজ দ্বিতীয় পুলকেশী সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। শুধু তাই নয়, সমগ্র দক্ষিণ ভারতের আদি মধ্যযুগের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য মহত্তম শাসকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান অধিকার করে আছেন। দ্বিতীয় পুলকেশীর শাসনকাল ও তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের হাতে যথেষ্ট তথ্য আছে। সাহিত্যিক উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণমূলক গ্রন্থ তা-তাং-সি-ইউ-কি (সংক্ষেপে সি-ইউ-কি)।
শিলালেখর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জৈন কবি রবিকীর্তি রচিত আইহোল প্রশস্তি। এটি লেখা হয়েছিল ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে জিনেন্দ্র মন্দিরের কাজ সমাপ্তির সময়। এছাড়াও অন্যান্য শিলালেখ যথা হায়দরাবাদ তাম্রশাসন (৬১২ খ্রিঃ), তাঁর ষষ্ঠ রাজ্যাঙ্ক বর্ষের একেরি শিলালেখ এবং লোহার তাম্রশাসন (৬৩০ খ্রিঃ) এ ব্যাপারে কাজে লাগে। পার্শ্ববর্তী দুটি রাজবংশের সমসাময়িক ও পরবর্তীকালের দুটি শিলালেখ থেকেও তাঁর রাজত্বকাল সম্পর্কে তথ্য আহরিত হয়ে থাকে। এগুলি হল। যথাক্রমে পল্লব শাসক নরসিংহবর্মণের বাতাপি লেখ এবং গুর্জররাজ তৃতীয় জয়ভটের নৌসরী লেখ (৭০৬ খ্রিঃ)। দ্বিতীয় পুলকেশী বিভিন্ন বিশেষণ যথা ‘পরমেশ্বর’, ‘শ্রীপৃথিবীবল্লভ’ প্রভৃতিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি সত্যাশ্রয় নামেও পরিচিত।
দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব :
দ্বিতীয় পুলকেশীর শাসনকালের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আলোচনার সুবিধার্থে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে। প্রথমটি দাক্ষিণাত্য তথা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর অভিযান এবং সেগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতা। অপরটি বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরাংশে চালুক্য রাজ্যের বিস্তারের আকাঙ্ক্ষা এবং পৃষ্যভূতি বংশীয় শাসক হর্ষবর্ধনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত ও সাফল্য লাভ।
দাক্ষিণাত্য তথা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পুলকেশীর সংঘাত এবং বাদামির চালুক্য বংশের সমকালীন অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে আইহোল প্রশস্তিতে। উল্লেখ্য, পিতৃব্য মঙ্গলেশকে হত্যা করে দ্বিতীয় পুলকেশী সিংহাসনে বসার পর চালুক্য সাম্রাজ্য জুড়ে এক অরাজক ও চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আইহোল প্রশস্তিতে এই পরিস্থিতিকে তুলে ধরা হয়েছে এইভাবে : “সমগ্র সাম্রাজ্য শত্রুদের দ্বারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল।’ এই প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, সিংহাসনে আরোহণের অল্প কাল পরে চালুক্য শাসনের প্রধান কেন্দ্রস্থল বিজাপুর অঞ্চলেই আপ্পায়িক ও গোবিন্দ নামে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বিতীয় পুলকেশীর সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন। এতে পুলকেশী অবশ হতোদ্যম হননি। আপ্পায়িক কে পরাজিত করেন এবং পুরস্কৃত করার লোভ দেখিয়ে গোবিন্দকে নিজ বশে আনেন।
এইভাবে প্রারম্ভিক পর্বের সমস্যাগুলির সমাধান করে নিজ অবস্থানকে সুদৃঢ় ও মজবুত করার পর দ্বিতীয় পুলকেশী তাঁর প্রতিবেশী ছোট ছোট রাজ্যগুলি জয় করে সেগুলি নিজ দখলে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। আইহোল প্রশস্তি থেকে জানা যায়। যে তিনি প্রথমে কদম্বদের রাজধানী বনবাসী দখল করেন। এখানে উল্লেখ করা যায়। যে ইতিপূর্বে তাঁর পিতা প্রথম কীর্তিকর্মণ কর্তৃক কদম্বদের ক্ষমতা অনেকটা দমিত হয়েছিল। এরপর তিনি দক্ষিণ মহীশূরের গঙ্গ এবং মহীশূরের শিযোগ জেলার হুমচো-তে শাসনরত আলৃপদের বিরুদ্ধে অভিযানে রত হন। এই দুই শক্তি পুলকেশীর প্রভুত্ব মেনে নেন এবং তাঁর অধীন সামস্তরূপে শাসন করার অধিকার লাভ করেন। শুধু তাই নয়, গঙ্গরাজ দুর্বিনীত চালুক্যরাজের এই বিজয় স্বরূপ তাঁর এক কন্যাকে দ্বিতীয় পুলকেশীর সঙ্গে বিবাহ দেন।
উত্তর কোঙ্কনে শাসনরত মৌর্যদের বিরুদ্ধেও তাঁর সেনাদল প্রেরিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এর আগে তার পিতার আমলে মৌর্যনের ক্ষমতা অনেকটা দমিত হয়েছিল। দ্বিতীয় পুলকেশী বাণিজ্যিক দিক থেকে লাভজনক এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি চালুক্যদের অধিকারে আনার কাজে ব্রতী হন। শক্তিশালী নৌবাহিনীর সাহায্যে মৌর্যদের রাজধানী আরব সাগর সংলগ্ন পুরী (সম্ভবত মুম্বই-এর নিকটস্থ এলিফ্যান্টা দ্বীপ) তিনি আক্রমণ করেন এবং তা দখল করে নেন। এই সমস্ত কাজে তিনি প্রায় ছয়-সাত বছর ব্যস্ত ছিলেন। এখানে উল্লেখ করা যায় যে এই সময় চালুক্য প্রশাসন পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁর অনুগত ভাই বিষ্ণুবর্ধন।
আইহোল প্রশস্তি থেকে আরো জানা যায় যে, লাট, মালব ও গুর্জররা স্বেচ্ছায় তাঁর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল। গুজরাট অঞ্চল যে তাঁর অধীনে আনার সক্রিয় প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল তার প্রমাণ মেলে ঐ এলাকায় পুলকেশী কর্তৃক প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগের বিষয়টি থেকে। পূর্ববর্তী অধ্যায়ে যুক্তি সহকারে দেখানো হয়েছে যে, হর্ষবর্ধনের সঙ্গে গুর্জররাজ দ্বিতীয় দড্ডের দ্বন্দ্ব ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় পুলকেশীর সার্বভৌমত্ব দড্ড মেনে নিয়েছিলেন। সুতরাং বদ্ধ দজ্জো পিছনে দ্বিতীয় পুলকেশীর ন্যায় বিরাট শক্তি কাজ করেছিল। হর্ষবর্ধন যে দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই ।
ওপরে উল্লেখিত বিভিন্ন অঞ্চল নিজ অধিকারে আনার ফলে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। আইহোল প্রশস্তির ২৫নং স্তবকে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, তিন-মহারাষ্ট্র (ত্রিমহারাষ্ট্রকম’)-এর ওপর তাঁর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরো ঘোষণা করা হয়েছে যে ৯৯ হাজার গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত ছিল এই তিন মহারাষ্ট্র। এই শেষোক্ত বক্তব্য খুব সম্ভবত অতিরঞ্জন দোষে দুষ্ট। তিন মহারাষ্ট্র বলতে এখানে মহারাষ্ট্র, কোঙ্কন ও কর্ণাটককে সম্ভবত বোঝানো হয়েছে বলে ঐতিহাসিক দীনেশচন্দ্র সরকার মনে করেন।
অতঃপর দ্বিতীয় পুলকেশী দাক্ষিণাত্যের পূর্বাংশের দিকে তাঁর অভিযান প্রেরণ করেন, যা অতি সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে আইহোল প্রশস্তিতে। এতে বলা হয়েছে যে কোসল-রা (সম্ভবত দক্ষিণ কোসলের পাণ্ডুবংশীরা) ও কলিঙ্গরা (সম্ভবত গঞ্জাম জেলার কলিঙ্গনগরের পূর্ব গঙ্গরা) পুলকেশীর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত হয়েছিল। অধ্যাপক এ. এস. আলতেকার মনে করেন যে এটা ছিল কেবল সামারিক অভিযান মাত্র, যার স্থায়ী ফল বিশেষ ছিল না।’ এরপর ৬২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পুলকেশী আরো দক্ষিণে অন্ধ্রদেশের অভ্যন্তরে অভিযানে ব্রতী হন। তিনি বর্তমান গোদাবরী জেলার পিঠপুরম (পিষ্টপুর)-এ প্রবেশ করেন। উল্লেখ্য, তখন সেখানে শাসন করছিলেন।
বিষ্ণুকুতিন বংশের এক সামন্ত। পিষ্টপুর সংলগ্ন এলাকা তাঁর অধিকারে আসে। বিষ্ণুকুণ্ডিনরা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উত্তাল হলেও শেষপর্যন্ত পরাভূত হন। এরপর তাঁর অনুগত ভাই যুবরাজ বিষ্ণুবর্ধনকে পিষ্টপুরের শাসনকর্তা হিসাবে তিনি নিয়োগ করেন। এইভাবে দ্বিতীয় পুলকেশী বিখ্যাত বেঙ্গীর পূর্ব চালুক্য বংশের প্রতিষ্ঠা ঘটান এবং এর প্রথম শাসক হন বিষ্ণুবর্ধন। উল্লেখ্য ১০৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই রাজবংশের শাসন বজায় ছিল এবং তারপর তা চোল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
অন্ধ্রদেশের এক বিশাল অংশের ওপর অধিকার স্থাপন এবং গঙ্গদের ওপর প্রভুত্ব বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ ভারতের তৎকালীন বৃহত্তর শক্তি হিসাবে খ্যাত পল্লবদের সঙ্গে দ্বিতীয় পুলকেশীর সংঘাত বাধে। বস্তুতপক্ষে, চালুক্য-পল্লব প্রতিদ্বন্দ্বিতার পিছনে নিহিত ছিল ভৌগোলিক কারণ। পুলকেশী মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন তুঙ্গভদ্রা নদীর দক্ষিণে চালুক্য শক্তির বিস্তার ঘটাতে। অপরদিকে পল্লবদের উদ্দেশ্য ছিল তুঙ্গভদ্রার উত্তরে তাদের প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক বিষয়কে সামনে রেখে উভয় শক্তি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিল। পল্লবদের সঙ্গে চালুক্যদের সংঘাত দ্বিতীয় পুলকেশীর আমলে অন্ততপক্ষে দুটি পর্যায়ে হয়েছিল। প্রথমবার তিনি পল্লবরাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ (আঃ ৬০০-৬৩০ খ্রিঃ)-এর বিরুদ্ধে একটি অভিযান প্রেরণ করেন, যার উল্লেখ আছে আইহোল প্রশস্তিতে।
প্রসঙ্গত বলা যায় গঙ্গবাড়ি ও অন্ধ্রদেশ কেন্দ্রস্থল হওয়ায় তাঁর পক্ষে শত্রুপক্ষ পল্লবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংঘটিত করা ছিল সহজ। আইহোল প্রশস্তিতে দাবি করা হয়েছে যে, পুলকেশী মহেন্দ্রবর্মণকে কাঞ্চী (পল্লবদের রাজধানী)-র কেল্লায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিলেন। এই বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে চালুক্যরাজ পল্লব রাজ্যের মূল কেন্দ্রে প্রবেশ করে তাকে পরাজিত করেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার এর ফলে পল্লবদের রাজধানী কিছুটা বিপন্ন হয়ে পড়েছিল, কিন্তু চালুক্যরাজ কর্তৃক তা অধিকৃত হয়নি। এই বিষয়টি প্রমাণিত হয়। পল্লবদের কাসাকুড়ি তাম্রশাসন থেকে। এতে দাবি করা হয়েছে যে কাঞ্চীর ১৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত পল্ললূর (বর্তমান পল্লিলোর)-এর যুদ্ধে প্রথম মহেন্দ্রবর্মণ তাঁর প্রধান শত্রুদের ধ্বংস করেছিলেন।
দীনেশচন্দ্র সরকার মনে করেন যে এখানে শত্রুপক্ষ বলতে বাদামির চালুক্যদের বোঝানো হয়েছে। এ. এস. আলতেকার এবং নীলকান্ত শাস্ত্রীও পল্ললুর-এর যুদ্ধকে চালুক্য ও পল্লবদের মধ্যে সংঘাত বলেই চিহ্নিত করেছেন। নীলকান্ত শাস্ত্রী মহাশয় অবশ্য মন্তব্য করেছেন যে, এই যুদ্ধে জয়লাভের সূত্র ধরে মহেন্দ্রবর্মণ তাঁর রাজধানীকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেও উত্তর দিকের কিছু এলাকা তিনি শত্রুপক্ষ (দ্বিতীয় পুলকেশী)-কে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং পল্লবদের বিরুদ্ধে প্রেরিত প্রথম পর্বের এই অভিযানে পুলকেশী সম্পূর্ণ না হলেও কতকাংশে সাফল্য লাভ করেন। এইভাবে দীর্ঘস্থায়ী চালুক্য-পল্লব সংঘাতের সূচনা ঘটে।
দ্বিতীয় পুলকেশীর আমলে চালুকা-পদ্মব দ্বন্দ্বের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় এরপর। যদিও প্রথম পর্বে পল্লবদের ক্ষমতা সাময়িকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়েছিল তথাপি পুলকেশী দ্বিতীয় পর্বের অভিযান প্রেরণের আগে বেশ সচেতন পদক্ষেপ নেন। উল্লেখ্য কাবেরী নদী অতিক্রম করে পল্লবদের চিরশত্রু বলে পরিচিত চোল, কেরল ও পাণ্ড্যদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বলাবাহুল্য, এই পদক্ষেপ গ্রহণ তাঁর চরম কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। এই সময় পল্লব সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন মহেন্দ্রবর্মণের পুত্র প্রথম নরসিংহবর্মণ।
দ্বিতীয় পুলকেশী প্রথমে পল্লবদের সামস্ত হিসাবে রায়লসীমাতে শাসনরত বানসদের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে তাঁর এই পর্বের অভিযান শুরু করেন। তাঁদের রাজ্য বিশ্বস্ত করার পর তিনি পল্লব শাসনাধীন এলাকায় সরাসরি প্রবেশ করেন এবং পুনরায় রাজধানী বিপন্ন করার চেষ্টা নেন। পল্লবদের লেখমালা থেকে অবহিত হওয়া যায় যে নরসিংহবর্মণ পারিয়লা, মণিমঙ্গল ও শূরমার—এই তিনটি যুদ্ধে পরপর দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত করেন। এই অঞ্চলগুলি পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চীপুরম থেকে খুব দূরে অবস্থিত ছিল না। প্রসঙ্গত বলা যায়। এই সমস্ত যুদ্ধে নরসিংহবর্মণ সিংহলের শাসক মানবর্মার উপযুক্ত সাহায্য লাভ করেছিলেন। এইভাবে চালুক্যরাজের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
পুলকেশীর এই দ্বিতীয় পর্বের পল্লব অভিযানের ফল চালুক্য শক্তির পক্ষে ক্ষতিকারক হয়েছিল। কেননা, আশাতীত সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পল্লবরাজ নরসিংহবর্মণ জোরপূর্বক চালুক্য রাজ্য আক্রমণ করেন এবং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে রাজধানী বাতাপিতে প্রবেশ করেন। দ্বিতীয় পুলকেশী তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে ব্যর্থ হন। এই সুযোগে নরসিংহবর্মণ বাতাপি (বাদামি) দখল করে নেন। চালুক্য রাজধানী অধিকারকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি ‘বাতাপি-কোণ্ড’ বা বাতাপি বিজেতা উপাধি নেন। বাদামিতে মল্লিকার্জুনদেবের মন্দিরের পিছনে পাথরে খোদাই করা তাঁর একটি লেখ থেকে এই বিষয়টি জানা যায়। নরসিংহবর্মণের ১৩ রাজ্যাঙ্কবর্ষে এটি খোদিত হয়েছিল ।
মূল্যায়ন:
দীর্ঘ আলোচনার পর এখন দ্বিতীয় পুলকেশীর কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নে প্রবৃত্ত হওয়া যেতে পারে। উল্লেখ করা যায় যে সম্ভবত ৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ভগ্ন হৃদয়ে পুলকেশী প্রাণত্যাগ করেন। কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন নরসিংহবর্মণ দ্বিতীয় পুলকেশীকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু এই মতের সত্যতা সম্পর্কে সংশয় আছে। তাঁর মৃত্যুর পর বাদামির চালুক্য রাজবংশের ইতিহাসে এক সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাদামির চালুক্য বংশের ইতিহাসে মহারাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব অবিস্মরণীয় ।