প্রথম বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন আহরণ সংক্ষেপে আলোচনা কর। প্রথম বিক্রমাদিত্যের কৃতিত্ব ।
এ সময় দ্বিতীয় পুলকেশীর মৃত্যু ঘটেছিল এবং পল্লবরাজ প্রথম নরসিংহবর্মণ বাদামি দখল করে বাতাপি-কোণ্ড উপাধি ধারণ করেছিলেন (আঃ ৬৪২ খ্রিঃ)। কতদিন তিনি চালুক্য রাজধানী দখলে রেখেছিলেন অথবা চালুক্য সাম্রাজ্যে পল্লব আধিপত্য বজায় ছিল তা সঠিক করে বলা শক্ত। তবে অনুমান করা সম্ভব হয় যে চালুক্য সাম্রাজ্যে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি বজায় ছিল পরবর্তী প্রায় ১১/১২ বছর ধরে। কেননা, চালুক্য বংশের কিছু লেখ থেকে জানা যায় যে ৬৫৪/৫৫ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় পুলকেশীর অন্যতম পুত্র প্রথম বিক্রমাদিত্য তাঁর মাতামহ গঙ্গরাজ দুর্বীনিত’র সাহায্যে শত্রুদের হাত থেকে বাদামিকে রক্ষা করতে এবং পিতৃ সিংহাসনকে কণ্টকমুক্ত করার কাজে সফল হয়েছিলেন। এরপর তিনি চালুক্য সাম্রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন। সত্যাশ্রয়, রণরসিক, অনিবারিত ও রাজমল্ল প্রভৃতি বিশেষণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
৬৫৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ৬৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসের মধ্যে কোনো এক সময়ে প্রথম বিক্রমাদিত্য সিংহাসনে আরোহণ করে অল্পকালের মধ্যেই (৬৫৪/৫৫-৬৮১ খ্রি:) চালুক্য সাম্রাজ্যে নিজ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। অবশ্য পল্লবদের সঙ্গে সংঘাত তাঁর আমলেও বহমান ছিল। তিনজন খ্যাতিমান পল্লব শাসক যথা প্রথম নরসিংহবর্মণ, দ্বিতীয় মহেন্দ্রবর্মণ এবং প্রথম পরমেশ্বরবর্মণের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্রমাদিত্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
পল্লবদের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্রমাদিত্য যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল সে ব্যাপারে চালুক্য ও পল্লব লেখমালায় যেসব কথা বলা হয়েছে বা যেসব দাবি করা হয়েছে সেগুলি অনেক সময় পরস্পরবিরোধী। প্রথম দিকের অভিযানে তিনি সফল হয়েছিলেন বলেই মনে হয়। হায়দরাবাদ লেখতে বলা হয়েছে যে, নরসিংহবর্মণের খ্যাতি তিনি ম্লান করে দেন। এবং মহেন্দ্রবর্মণের ক্ষমতা ও দর্প চূর্ণ করেন। এছাড়া হোন্নুর লেখ থেকে জানা যায় যে কোনো এক সময় বিক্রমাদিত্য কাঞ্চীও দখল করে নেন। কেননা, এতে বলা হয়েছে, ৬৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাঞ্চীর পশ্চিমে মল্লিয়ূর গ্রামে একটি শিবির স্থাপন করেছিলেন। এই ঘটনা ঘটেছিল খুব সম্ভবত প্রথম পরমেশ্বরবর্মণের রাজত্ব কালে (৬৭০-৯৫ খ্রিঃ)। আবার পল্লবদের একটি লেখতে দাবি করা হয়েছে যে বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে পরমেশ্বরবর্মণের ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ত্রিচিনোপলি জেলার পেরুবলনঘুরে এবং এই যুদ্ধে চালুক্য বাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছিল।
সুতরাং এমনও হতে পারে যে পরমেশ্বরবর্মণকে প্রথম দিকে পরাজিত করে কাঞ্চী কিছুকাল বিক্রমাদিত্যের অধিকারে এলেও শেষদিকে তিনি পরমেশ্বরবর্মণের কাছে পরাভূত হন। এর থেকে উভয় পক্ষের সামরিক শক্তির সমতার কথা অনুমান করা সম্ভব হয়।
প্রথম বিক্রমাদিত্যের পরেও বাদামির চালুক্য বংশ আরও প্রায় ৭৫ বৎসর টিকে ছিল। এই সময়ের শাসকরা হলেন যথাক্রমে বিনয়াদিত্য (৬৮১-৬৯৫ খ্রিঃ), বিজয়াদিত্য (৬৯৬-৭৩৩ খ্রিঃ), দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য (৭৩৩-৭৪৪ /৫৪ খ্রিঃ) এবং দ্বিতীয় কীর্তিকর্মণ ( 988 / 8৫ – ৭৫৭ খ্রিঃ)। এঁদের রাজত্বকালে চালুক্য-পল্লব সংঘাত তীব্র না হলেও বহমান ছিল। এঁদের আমলের বেশ কিছু স্থাপত্য-ভাস্কর্যের নিদর্শন লক্ষ করা যায়, যা পরে বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়েছে। যাই হোক না কেন, দ্বিতীয় কীর্তিকর্মণই ছিলেন পশ্চিমী চালুক্য বংশের শেষ শাসক, যাঁকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে চালুক্য বংশের দীর্ঘদিনের সেনানায়ক দস্তিদুর্গ রাষ্ট্রকূট বংশের সূত্রপাত ঘটান। তবে দ্বিতীয় কীর্তি বর্মণের ওপর শেষ আঘাত হেনে রাষ্ট্রকূটদের অধিকারকে সুদৃঢ় করেন দন্তিদুর্গের পরবর্তী শাসক প্রথম কৃষ্ণ (৭৫৭-৭৩ খ্রিঃ)।