StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলোচনা কর

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব আলোচনা কর। মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের তাৎপর্য  ব্যাখ্যা কর ।

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য  

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের সংস্কার আইন ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন সমস্যার আমদানি করেছিল। জওহরলাল নেহরু লিখেছেন যে শত শত বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল এই আইন তার মূলে কুঠারাঘাত করেছিল। মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর (separate electorate) ব্যবস্থা করা হলে এবং সংখ্যানুপাতের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে শিখ, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, হরিজন ও ইউরোপীয়রা তা দাবি করতে থাকে।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের আইনে এদের জন্য পৃথক সংরক্ষিত নির্বাচকমণ্ডলী গঠন করতে হয়। অস্বীকার করা যায় না এর ফলে ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রগতি ব্যাহত হয়েছে। জাতীয় ঐক্যের ধারণা প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিল। মহাত্মা গান্ধি লিখেছিলেন ‘মলে-মিন্টো সংস্কার আইন আমাদের সর্বনাশ করেছে (Morley Minto reforms have been our undoing)। এই আইন ভারতীয়দের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়। জাতীয়তাবাদীরা উদারপন্থী মর্লের কাছে দায়িত্বশীল সরকার গঠনের দাবি রেখেছিলেন, পেয়েছিলেন জনকল্যাণকামী স্বৈরাচার। এর বহিরাবরণ অনেকটা গণতান্ত্রিক কিন্তু মর্লে পার্লামেন্টে পরিষ্কার জানিয়ে দেন ভারতে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র স্থাপনের ইচ্ছা সরকারের নেই। মর্লের এই ঘোষণায় ভারতের সদ্যোজাত জাতীয়তাবাদ ও তার উদারপন্থী ধারকরা ভয়ানক আশাহত হন।

এই সংস্কার প্রবর্তনের সময় বিস্তৃত নিয়মবিধি রচিত হলে দেখা যায় এর রচয়িতারা দায়বদ্ধ সরকারের কথা ভাবেননি। এস. আর. মেহরোত্রা লিখেছেন যে এই আইনের ফলে সরকার বা বিরোধী পক্ষ কারও কোনোরূপ দায়বদ্ধতা ছিল না। সরকারের শাসনের দায়বদ্ধতা ছিল না, বিরোধী পক্ষের ছিল না সমালোচনার। সরকার আগের মতো দায়বদ্ধতাহীন স্বৈরাচারী রয়ে যায়।

সরকারের গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। মহম্মদ আলি জিন্নাহ্ কেন্দ্রীয় আইনসভায় দুবার নির্বাচিত হয়ে এই আইনের অসারতা উপলব্ধি করেন। নির্বাচন ছিল অতি সীমিত, জটিল ও পরোক্ষ। চারটি স্তরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জনগণ নির্বাচন করেন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের, তাঁরা নির্বাচন করেন নির্বাচকমণ্ডলী, নির্বাচকমণ্ডলী প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের আর প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যরা নির্বাচন করেন কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্যদের। প্রাদেশিক আইনসভায় বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল নামমাত্র। এদের মধ্যে মনোনীত সদস্যরা সরকারি সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেসরকারি সদস্যদের গরিষ্ঠতা নষ্ট করে দিত। পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে শাসন পরিষদ ছিল না, সেন্ট্রাল প্রভিন্সে আইনসভা গঠিত হয়নি।

ত্রুটি ও অপূর্ণতা সত্বেও ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন একেবারে তাৎপর্যহীন নয়। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ । নরমপন্থীদের স্বায়ত্তশাসনের ধারণা প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেও গোখলে ও অন্যান্য নরমপন্থী নেতারা এই আইনের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। তাঁরা মর্লেকে তাদের বন্ধু হিসেবে গণ্য করেন, আর তাঁদের ধারণা হয় এই আইনের ব্যর্থতা তুলে ধরলে চরমপন্থীরা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের এলাহাবাদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত এই আইনের পক্ষে কংগ্রেস প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অল্পকাল পরে নিয়মবিধি রচিত হলে তাঁদের হতাশা আর চাপা ছিল না। নরমপন্থীরা মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি, এদের মনে হয়েছিল এতে দেশে সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পাবে। এই আইনে যে ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল নরমপন্থীরা তারও নিন্দা করেছিল। নির্বাচন ছিল অত্যন্ত সীমিত, সাম্প্রদায়িক ও পরোক্ষ। এইসব গণতান্ত্রিক নীতি বিরোধী শর্তগুলি উল্লেখ করে কংগ্রেস এই আইনের সংশোধন চেয়েছিল। দেশের রাষ্ট্রনেতাদের অনেকে অবশ্য মনে করেন এই আইনটি ছিল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সরকারের দিকে এক দৃঢ় পদক্ষেপ। আশ্চর্যের বিষয় হল মলের পরিষ্কার ঘোষণা সত্ত্বেও তাঁরা এই ধারণা আঁকড়ে বসেছিলেন।

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের আইনের ফলে মুসলমান সম্প্রদায় লাভবান হয়েছিল। তাদের স্বতন্ত্র নির্বাচকমণ্ডলীর দাবি এবং প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব স্বীকৃতি লাভ করেছিল। চরমপন্থী নেতাদের অনেকে এই সময় জেলে ছিলেন, সেজন্য তাদের প্রতিবাদ তেমন শোনা যায়নি। তবে সরকারি স্তরে ১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই আইনের ত্রুটিগুলি ধরা পড়েছিল। যে উদ্দেশ্যে নিয়ে মর্গে প্রাদেশিক আইনসভায় সরকারি সদস্যদের গরিষ্ঠতা তুলে দেন তা সফল হয়নি। শাসক ও শাসিতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। এই আইনের ফলে ভারতীয় নেতারা রাজনৈতিক দায়িত্ব নিতে শেখেননি।

মূল্যায়ন : 

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতির ওপর যে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় তাতে এই আইনের ত্রুটিগুলি তুলে ধরা হয়েছিল। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আর কুপল্যান্ড (Coupland) মনে করেন ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে যে সাংবিধানিক ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এসে তা প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। অস্বীকার করা যায় না অনেক ত্রুটি ও অপূর্ণতা সত্ত্বেও মলে-মিন্টো সংস্কার আইন ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের আইনের চেয়ে অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। একটিমাত্র ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছিল, সেটি হল সাম্প্রদায়িক নির্বাচকমণ্ডলী। এটি হল পশ্চাৎমুখী, বিচ্ছিন্নতাবাদী পদক্ষেপ, অবশ্যই প্রগতি বিরোধী। অনেকে একে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সূচনা বিন্দু হিসেবে দেখেছেন।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *