StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা কর

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের কারণ গুলি আলোচনা কর ।

রাজদরবারে প্রিন্স কুং এবং প্রদেশগুলিতে সেং কুয়ো ফ্যান, সো সুং টাং ও লি তা চাং উপলব্ধি করেছিলেন যে চিনের আত্মরক্ষার উপায় হল বিদেশিদের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান গ্রহণ করে উন্নততর সৈন্যবাহিনী ও নৌবহর গঠন করা। এজন্য আধুনিক কয়েকটি শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন কারণ আধুনিক সৈন্যবাহিনী আধুনিক শিল্পের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। আবার প্রযুক্তি শিক্ষাদানের জন্য আধুনিক শিক্ষায়তন গড়ে তোলাও প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকে চিনে আত্মশক্তি বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু হয়েছিল তুং চি যুগে, চলেছিল ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। চিনা ভাষায় এর নাম জু চিয়াং (Tau-Chiang)।

ওয়ে য়ুয়ান (Wei Yuan) প্রথম বলেছিলেন যে বর্বরদের দমন করার জন্য বর্বরদের প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে (leam the superior techniques of the barbarians to control the barbarians)। রবীন্দ্রনাথ ঠিক একই ধরনের কথা বলেছিলেন : “যুরোপ যে শক্তিতে পৃথিবীতে সর্বজয়ী হয়ে উঠেছে, একমাত্র সেই শক্তি দ্বারাই তাকে ঠেকানো যায়। নইলে তার চাকার নিচে পড়তেই হবে এবং একবার পড়লে কোনোকালে আর উঠবার উপায় থাকে না।’ দরবারে এই নীতির সমর্থক হলেন রাজকুমার কুং ও ওয়েন সিয়াং। আফিম যুদ্ধে পরাজয়, বিদেশিদের পিকিং অধিকার এবং উন্নত সমরাস্ত্রের সাহায্যে তাইপিং বিদ্রোহ দমন চিনের আধুনিকতার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। শুল্ক বিভাগের অফিসার লে-র নেতৃত্বে একটি নৌবহর গঠন করা হয়। পরে বিদেশি অফিসারদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তা ভেঙে দিয়ে চিনের প্রাদেশিক নেতাদের অধীনে নৌবহর গঠনের কাজ শুরু হয়।

আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের কারণগুলি কে তিনটি পর্বে আলোচনা করা হয়। তিনজন প্রাদেশিক নেতার অধীনে আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলন গতি লাভ করেছিল। ইমানুয়েল সু আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের মধ্যে তিনটি পর্ব লক্ষ করেছেন— ১৮৬১-১৮৭২, ১৮৭২-১৮৮৪ এবং ১৮৮৪-১৮৯৪। প্রথম পর্বে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল পিকিং শহরে বৈদেশিক দপ্তর সুংগলি ইয়ামেনের প্রতিষ্ঠা এবং সাংহাই ও তিয়েনসিনে দু’জন বাণিজ্য আধিকারিকের নিয়োগ। পরে বিদেশি ভাষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষায়তনগুলি স্থাপন করা হয়। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল।

লি সুচাও শহরে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করেন। সাংহাই শহরে গড়ে উঠেছিল আধুনিক অস্ত্রকারখানা কিয়াংনান, এই কারখানার সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি অনুবাদ কেন্দ্র। ফুচাও বন্দরে গড়ে তোলা হয় জাহাজ নির্মাণ কারখানা, নেতৃত্ব দেন সো-সু ট্যাং। এই কারখানার যন্ত্রপাতি এসেছিল ফ্রান্স থেকে। এই কারখানার সঙ্গে দুটি শিক্ষায়তন যুক্ত ছিল—একটি শেখাত জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি ও ফরাসি ভাষা, অন্যটিতে শেখানো হত নৌবিদ্যা ও ইংরেজি ভাষা। লি নানকিং শহরে গড়ে তোলেন তাঁর অস্ত্র কারখানা, চুং হু তিয়েনসিনে স্থাপন করেন যন্ত্র তৈরির কারখানা। টাকুতে গড়ে তোলা হয় আধুনিক দুর্গ, বিদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিদেশ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের প্রয়াস চালানো হয়। বিদেশে ছাত্র পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছিল। এই পর্বে কয়লা ও লৌহ খনি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এসব ছিল আত্মশক্তি বৃদ্ধির আবশ্যিক পূর্বশর্ত।

প্রথম পর্বে যেসব শিল্প স্থাপিত হয় তার সঙ্গে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সম্পর্ক ছিল। এগুলি সরকারি উদ্যোগে স্থাপিত হয় কিন্তু পরিচালকরা ছিলেন পুরোনোপন্থী, অদক্ষ, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা। বিদেশিদের ওপর এগুলি পরিচালনার ভার দেওয়া হত তাদের যোগ্যতা যাচাই না করে। নানকিং অস্ত্র কারখানার তদারকির ভার দেওয়া হয়েছিল ম্যাকার্টনি নামক এক ডাক্তারকে। ফুচাও জাহাজ নির্মাণ-কারখানা তদারকি করতেন দু’জন ফরাসি যারা কখনও জাহাজ নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হত, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ ছিল, সেজন্য উৎপন্ন অস্ত্রশস্ত্র ও জাহাজ গুণগত মানে বিদেশিদের মতো হত না। কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে এসব কারখানা গড়ে ওঠেনি, এগুলি ছিল প্রাদেশিক শাসকদের অধীন। তারা এগুলিকে কেন্দ্র করে নতুন ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। সন্দেহ নেই সামন্ততান্ত্রিক প্রবণতা ও আঞ্চলিকতা উৎসাহিত হয়। এসব আঞ্চলিক নেতাদের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয় পর্বে আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের নেতারা উপলব্ধি করেন যে সম্পদ হল শক্তির আসল উৎস (China’s chronic weakness stems from poverty)। প্রতিরক্ষার জন্য ব্যয় বেড়েছে, ব্যয় বেড়েছে উন্নততর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত শিল্প ছাড়াও সম্পদ সৃষ্টির জন্য জাহাজ নির্মাণ, রেলপথ স্থাপন, খনি খনন, ডাক ও তার ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটানো হয়। দু-ধরনের শিল্প স্থাপিত হয়—সরকারি উদ্যোগে ও সরকারের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি উদ্যোগে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল চায়না মার্চেন্টস স্টিম নেভিগেশন কোম্পানি, কাইপিং কয়লা খনি, সাংহাই বস্ত্রকল এবং ইম্পিরিয়াল টেলিগ্রাফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। বেসরকারি বণিকদের কাছ থেকে মূলধন এসেছিল, লাভলোকসানের ঝুঁকি ছিল তাদের, এগুলি তদারকির ভার পেয়েছিল সরকারি আমলারা। দু-একটি ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যক্তিরা এগুলি পরিচালনার অধিকার পেয়েছিল।

সরকারি আমলাদের অদক্ষতা, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ এগুলির উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই পর্বের আত্মশক্তি বৃদ্ধি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন লি হুং চাং, তিনি বিধবা সম্রাজ্ঞীর আস্থাভাজন ছিলেন। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলি হল স্টিম নেভিগেশন, জাহাজ নির্মাণ, বিদেশে ছাত্র প্রেরণ, কাইপিং কয়লাখনির উদ্বোধন, সেচওয়ানে যন্ত্রনির্মাণ কারখানা, কানসুতে বস্ত্রশিল্পের প্রতিষ্ঠা ও টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন। আধুনিক নৌবহর গঠন, রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ, পোর্ট আর্থারে পোতাশ্রয় ও জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন এবং বিদেশে নৌবিদ্যা শিক্ষার জন্য ছাত্র প্রেরণ ছিল এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।

তৃতীয় পর্বে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি যেমন চলেছিল আধুনিক শিল্প স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় পেইয়াং নৌবহর (উত্তরের নৌবহর), বস্ত্র ও সুতো কারখানা স্থাপন করা হয়। উহানের গভর্নর জেনারেল ও নানকিং-এর গভর্নর জেনারেল নতুন শিল্প স্থাপনে এগিয়ে যান। দরবারে ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজকুমার চুন, কুং-এর পতন ঘটেছিল। এই পর্বে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ স্থাপিত হয়, তার সঙ্গে শুধু ছিল বেসরকারি উদ্যোগ। বেসরকারি বা সরকারি কোনো উদ্যোগই তেমন সফল হয়নি।

যৌথ উদ্যোগে কিয়াওচাও লৌহ কারখানা ও হুপেতে বস্ত্রকল স্থাপিত হয়। এসব উদ্যোগে বেসরকারি মূলধন বিনিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু পরিচালনা ছিল। আমলাদের হাতে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এপর্বে চিনে বেসরকারি উদ্যোগ ছিল সীমিত। এইপর্বে তিয়েনসিনে সামরিক কলেজ গড়ে তোলা হয়, মূলধন পিকিং-এ বোর্ড অব অ্যাডমিরালটি স্থাপিত হয়। ক্যান্টনে চ্যাং চি তং একটি বস্ত্রকল স্থাপন করেন, ক্যান্টন ও তিয়েনসিনে টাকশাল স্থাপন করা হয়। চ্যাং ক্যান্টন বন্দরে বস্ত্রকল ও লোহার কারখানা স্থাপন করেন। মোহতে সোনার খনির কাজ শুরু হয়। তে লোহার খনিতে কাজ শুরু হয়েছিল। হ্যানইয়াং-এ লোহার কারখানা ও পিং শিয়াং-এ কয়লা খনি থেকে নিষ্কাশন শুরু হয়। সাংহাইতে স্থাপিত হয় লুং চ্যাং কাগজ কল, কিয়াওচাওতে লোহার কারখানাটি সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়। বস্ত্রকল ও বস্ত্রকলের যন্ত্রপাতি তৈরির ওপর জোর পড়েছিল। অন্তত চারটি বস্ত্রকল ও একটি যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল। হুপেতে দুটি দেশলাই কারখানা গড়ে তোলা হয়, হুপে বস্ত্র কারখানা ছিল সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের ফল।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *