শিক্ষাক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীর অবদান সম্পর্কে লেখ।
ভূমিকা :
গান্ধীজী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক শিক্ষা ও অন্যান্য ধারণা সমূহ তার সামগ্রিক জীবন দর্শন থেকে উদ্ভূত। গান্ধীজীর মতাদর্শে মৌলিক ধারণা গুলি হল সত্য, কর্মযোগ , অহিংসা সত্যাগ্রহ এবং স্বদেশ ও স্বরাজ। গান্ধীজীর উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সনাতন আদর্শের সমাজ গঠন। শিক্ষা ক্ষেত্রে গান্ধীর অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো –
![]() |
মহাত্মা গান্ধী |
গান্ধীজীর মতে শিক্ষা দর্শন :
গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শন তার জীবন দর্শন থেকে উদ্ভব তিনটি প্রধান দার্শনিক মতবাদের মিশ্রিত রূপ। তার শিক্ষা দর্শনের লক্ষ্য ভাববাদী, গঠন প্রকৃতিবাদ এবং পদ্ধতি বা কাজক্রম প্রয়োগবাদী এই তিনটি মতবাদের সমন্বয় গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শন গড়ে উঠেছিল।
গান্ধীজীর মতে শিক্ষার লক্ষ্য :
গান্ধীজী শিক্ষা ক্ষেত্রে দুটি লক্ষ্যের কথা বলেছেন –
- শিক্ষার চরম লক্ষ্য : গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শন অনুযায়ী শিক্ষার চরম লক্ষ্য হলো ব্যক্তির আধান ঠিক শক্তির পূর্ণ প্রকাশ এই শক্তিকে জাগ্রত করে ব্যক্তি শক্তিমান হয়।
- শিক্ষার তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য: গান্ধীজি শিক্ষার তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্যর দিকে ব্যবহারিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন ব্যবহারিক দিকে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনের ফলে চরিত্রের বিকাশ স্বনির্ভরতা বিকাশ কৃষ্টি মূলক বিকাশ এবং ব্যাক্তি কেন্দ্রিক ও সামাজিক বিকাশ গড়ে তোলা সম্ভব।
গান্ধীজীর মতে শিক্ষক সম্পর্কিত মতবাদ:
গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শনে শিক্ষক কেবল মানুষ গড়া কারিগর নয়। তিনি সৌন্দর্যবোধ সম্পন্ন শিল্পী। শিক্ষক হবেন নিজের শিল্প কাজে উদ্যোগী ও নিপুন। শিক্ষকের আদর্শ চরিত্র শিক্ষার্থীর মধ্যে ভক্তি ও ঈশ্বরের প্রতি কর্তব্য পরায়ণতার বোধ জাগিয়ে তুলতে।
গান্ধীজীর মতে শিক্ষণ পদ্ধতি :
মহাত্মা গান্ধী বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। গান্ধীজী শিক্ষাকে সমগ্র জাতির উপযোগী করে পুনর গঠনের উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ এক শিক্ষা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। 1937 সালে তিনি এই শিক্ষা পদ্ধতির নাম দেন বুনিয়াদি শিক্ষা বা বেসিক এডুকেশন (Basic Education) কারণ এটি ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি ভূমি। এর বুনিয়াদের ওপর গড়ে উঠবে শিক্ষার্থীর পূর্ন বিকশিত দিকটি।
গান্ধীজীর বুনিয়াদি শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষার এক নতুন সংস্করণ। এই শিক্ষার মৌলিক বিষয় হল কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা হাতের কাজ ও শিল্প কর্মের মাধ্যমে শিক্ষা। গান্ধীজীর কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ভাবনার বাস্তব উপযোগিতা কে যাচাই করার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে শিশু শিক্ষার জন্য কর্মকেন্দ্রিক ও শিল্পকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। গান্ধীজীর মতে হাতের কাজ কুটির শিল্প ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বনির্ভরতার বিকাশ ঘটবে। এবং বুনিয়াদি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের কর্মভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে জীবিকা নিবাহী সক্ষম করে তোলা।
বয়স্ক শিক্ষা সম্পর্কে গান্ধীজীর ধারণা:
গান্ধীজীর শিক্ষা দর্শনে বয়স্ক শিক্ষা বা Adult Education এর ধারণা এক। তার মতে বয়স্ক শিক্ষার গুরুত্ব পূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, স্বাস্থ্য বিষয়, সামাজিক ইত্যাদি সকল দিক দিয়ে স্পর্শ করতে। এবং জনসাধারণকে নিরক্ষরতার এবং অগ্রতার অভিশাপ মুক্ত করায় বয়স্ক শিক্ষার উদ্দেশ্য।
গান্ধীজীর মতে শিক্ষার মাধ্যম :
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গান্ধীজি মাতৃভাষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন মাতৃভাষায় শিশুর ভাবের বিকাশ ও আত্ম বিকাশের যথাত মাধ্যম হতে পারে।
মূল্যায়ন :
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, শিক্ষাক্ষেত্রে গান্ধীজীর চিন্তা ব্যক্তি ও সমাজের মৌলিক চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু এই শিক্ষা পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করার ফলে বুনিয়াদি শিক্ষার সাফল্যের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তবে শিক্ষা চিন্তা আন্তরিকতা থেকে যে বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনা অভিনব ও অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। তার সত্বেও বলা যায় যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধীর অবদান অনস্বীকার্য।