StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

মেইজি জাপানে বস্ত্রশিল্পের বিকাশের উপর আলোকপাত কর

মেইজি জাপানে বস্ত্রশিল্পের বিকাশের উপর আলোকপাত কর।

মেজি যুগের জাপানে বস্ত্রশিল্প ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই শিল্পে প্রথম শিল্পবিপ্লব হয়। এই শিল্পে যন্ত্রের সাহায্যে ফ্যাক্টরি কেন্দ্রিক উৎপাদনের ব্যবস্থা হয়েছিল। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানের মোট শিল্পের ৫৬.৮ শতাংশ ছিল বস্ত্রশিল্প, আর এই শিল্পে কাজ করত মোট শিল্প শ্রমিকের ৬২.৮ শতাংশ। এই শিল্পে সবচেয়ে বেশি স্টিম বা জলশক্তি ব্যবহারের ব্যবস্থা হয়েছিল। মেজি যুগের শুরুতে সরকার পরিবহন, যোগাযোগ, খনি, রসায়ন ও ধাতু শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল, সরকারি উদ্যোগে এসব শিল্প স্থাপিত হয় কিন্তু বস্তুশিল্প ছিল পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগের হাতে।
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে জাপানে মোট শক্তিচালিত বস্তু কারখানা হল ১৯২১, এতে কাজ করত ১,৯৬,৭২৩ জন শ্রমিক। বস্ত্রশিল্পের দুটি  প্রধান শাখা হল সুতো তৈরি ও রেশম সুতো কাটা, এসব কাজে দ্রুত যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এই দুটির মধ্যে রেশম সুতো কাটার ক্ষেত্রে সহজে যন্ত্রের ব্যবহার করা সম্ভব হয় কিন্তু সুতি বস্ত্রের সুতোর ক্ষেত্রে তা অত সহজ ছিল না। যন্ত্রে সুতো কাটার ব্যবস্থা করার কাজ যেমন ছিল জটিল তেমনি ব্যয় সাপেক্ষ। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কারণে রেশম সুতো কাটার যান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছিল। জাপানে উন্নতমানের কাঁচা রেশম পাওয়া যেত, এই রেশম সুতোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক চাহিদা বেড়ে চলেছিল। অপরদিকে জাপানে ভালো তুলো উৎপন্ন হত না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি করা তুলো নিয়ে জাপানে সুতি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সুতি শিল্পের অন্য অসুবিধা হল ইংল্যান্ড থেকে উচ্চমানের সুতো আমদানি করা হত। বিদেশের বাজারে জাপানি সুতো রপ্তানিকারকদের কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়।
বিদেশে জাপানি রেশম সুতোর চাহিদা ছিল ক্রমবর্ধমান, এজন্য এই শিল্পের দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে। সত্তরের দশক থেকে জাপানি রেশম সুতোর চাহিদা বিদেশে কমে যায়। এজন্য জাপানি শিল্পপতিরা যন্ত্র বসিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে রেশম সুতো তৈরির দিকে মন দেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রাক্তন ডাইমিয়ো মাৎসুদারা তাদায়োশি প্রথম যন্ত্র বসিয়ে রেশম সুতো কাটার ব্যবস্থা করেন। জাপানের এক সমৃদ্ধ বণিক পরিবারের প্রধান ওনো এই ক্ষেত্রে অগ্রণীর ভূমিকা নেন। তিনি অনেকগুলি যন্ত্রচালিত রেশম সুতো কাটার কারখানা স্থাপন করেন। প্রথমটি স্থাপিত হয় টোকিও শহরে, এই ব্যবস্থা দ্রুত সমগ্র জাপানে ছড়িয়ে পড়েছিল (Machine reeling on European model was rapid and widespread)| সরকারি উদ্যোগে আধুনিক রেশম সুতো তৈরি উৎসাহিত হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি দেখা দিলে রপ্তানি বাড়াতে সরকার এরকম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। মেজি প্রত্যাবর্তনের সময় জাপানি বস্ত্রশিল্পের বেশিরভাগ ছিল হস্ত শিল্প, কৃষক পরিবার সময়ে সুতো কাটা ও বস্ত্র বয়নের কাজ করত। সুতো শিল্পে যন্ত্র ব্যবহারের কাজ অনেক দেরিতে শুরু হয়েছিল।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে জাপানে মাত্র তিনটি সুতো কাটার আধুনিক শিল্প ছিল, এর মধ্যে মাত্র একটি ছিল বেসরকারি উদ্যোগে। ১৮৭৩-৭৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুতোর উৎপাদন বেড়েছিল ২০০ শতাংশ। গোড়ার দিকে সুতো উৎপাদন শিল্পের কতকগুলি অসুবিধা ছিল, উৎপাদন ব্যয় ছিল বেশি, লাভ হত কম। পুঁজির সরবরাহ যথেষ্ট ছিল না, প্রযুক্তিগত ও সাংগঠনিক অসুবিধা ছিল। উৎপাদিত সুতো জাপানের প্রয়োজনের তুলনায় ছিল যথেষ্ট কম, সেজন্য সরকার সুতো কাটার মেশিন আমদানিকে উৎসাহ দিয়েছিল।
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকারি উৎসাহে বেসরকারি উদ্যোগ আরও দশটি সুতো মিল স্থাপিত হয়। সরকার সেনজু পশম মিল স্থাপন করে পশমি বস্ত্র উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছিল। জাপানের বস্ত্রশিল্পের ইতহাসে এর একটি বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। জাপানের শিল্পায়নে বস্ত্রশিল্প অগ্রাধিকার পেয়েছিল, এই শিল্পের মালিকানা ছিল বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে।
বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর লোক মেজি জাপানের বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। প্রাক্তন সামুরাই, ডাইমিয়ো, বণিক, ব্যাংকার সকলে বস্ত্রশিল্প স্থাপনের কাজে উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। ওসাকা ছিল বস্ত্রশিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র। শিবুসাওয়া এইচি ওসাকা কটন স্পিনিং কোম্পানি স্থাপন করে বস্ত্র উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিবিদদের আমদানি করা হয়। বস্ত্রশিল্পের মতো রেশম বস্ত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল বেসরকারি উদ্যোগে। টোকিওতে ওনো কোম্পানির সুকিজি মিল রেশম বস্ত্র তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেছিল। আধুনিককালে ওসাকা ও টোকিওতে কাপড়ের কলগুলি স্থাপিত হয়। সুতো ও কাপড়ের কলে বেশিরভাগ শ্রমিক ছিল মহিলা। তাদের অল্প মজুরি দিয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করানো যেত, এজন্য বস্ত্র শিল্পের পুঁজিপতিরা মহিলা শ্রমিকদের পছন্দ করত (In the late nineteenth century, textiles dominanted the industrial economy and women outnumbered men in the industrial labour force) |
জাপানি অর্থনীতিবিদ মাৎসুকাটার পরামর্শে সরকার সরকারি শিল্পোদ্যোগগুলি বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে জাপানি শিল্পের উড়ান পর্ব শুরু হলে শিবুসাওয়া ওসাকাতে বিশাল বস্ত্র কারখানা স্থাপন করেন, আরও অনেক পুঁজিপতি ওসাকাতে বস্ত্র শিল্প গড়ে তুলেছিল। ওসাকা হয়ে উঠেছিল বস্ত্রশিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র। বেসরকারি উদ্যোগে সুতো কাটা ও বস্ত্র তৈরি মেজি যুগে অন্তত দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাপান তার তৈরি সুতো বিদেশে রপ্তানি করতে থাকে। শুধু জাপানের বস্ত্র শিল্পে নিযুক্ত ছিল দুলক্ষ সাতচল্লিশ হাজার শ্রমিক, জাপানের মোট শিল্প শ্রমিকের ৬৩ শতাংশ। আশির দশকের ‘উড়ানকালের’ পর জাপনি শিল্পে খানিকটা মন্থরতা এসেছিল।
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে চিন-জাপান যুদ্ধের পর বস্ত্রশিল্প আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। রুশ-জাপান যুদ্ধ জাপানি শিল্পকে উৎসাহিত করেছিল, বস্ত্র শিল্পে উৎপাদন বেড়েছিল। জাপানের শিল্পপতিরা উৎপাদন ব্যয় কমানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য বড়ো বড়ো করপোরেশন বা কারটেল গঠন করেন। বস্ত্রশিল্পেও এধরনের করপোরেশন গড়ে উঠেছিল। মাৎসুকাটার সংস্কারের পর জাপানের বস্ত্রশিল্প পরিণত হয়েছিল, নিয়মিতভাবে সম্প্রসারণের কাজ চলতে থাকে।
Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *