1894-1895 সালের চীন-জাপান যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ কর। কেন চীন ছিল পরাজিত?
অথবা,
১৮৯৪-৯৫ সালে চীন জাপান যুদ্ধ কি অনিবার্য ছিল ?
১৮৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়াকে কেন্দ্র করে যে চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হয় তার বহুবিধ কারণ ছিল। এই কারণগুলিকে আমরা অপ্রত্যক্ষ (indirect) এবং প্রত্যক্ষ (direct) বা অব্যবহিত (immediate) কারণ হিসেবে আলোচনা করতে পারি।
জাপান ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মেজী পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর পুনরুজ্জীবিত হয়ে প্রগতিবাদী পাশ্চাত্য জগতে নিজের স্থান করে নিতে উদ্যোগী হয়। পাশ্চাত্য আদর্শের এই প্রগতিবাদী চিন্তাধারা জাপানে আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দিয়েছিল যা কোরিয়াকে কেন্দ্র করে প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধের (১৮৯৪-৯৫) সৃষ্টি করে। চীন-জাপান যুদ্ধের মূল কারণ যদিও জাপানের দৃঢ় আগ্রসী নীতির মধ্যে নিহিত ছিল, তবুও কোরিয়ায় চীন জাপানের পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গী ও স্বার্থ এই যুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। তাই ঐতিহাসিক কেটেলবি চীন-জাপান যুদ্ধকে আধুনিক সুদূর প্রাচ্যের ইতিহাসের সংকটজনক ও নির্ণায়ক ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন যার ফল ছিল মৌলিক গুরুত্বের (“The Sino Japanese war was the critical and decisive event in the modern history of the Far East, and from it followed consequences of fundamental importance.”)।
মেজী রেস্টোরেসনের পর জাপানের প্রধান লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্য জগতের সাথে সম্পাদিত অসম সন্ধির সংশোধন করে নতুন চুক্তি সম্পাদন। এই উপলক্ষে জাপান ১৮৭১ সালে ইউরোপে ইয়াকুরা মিশন পাঠিয়েছিল। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা তাকে একথা বুঝিয়েছিল যে সামরিক শক্তির বৃদ্ধি ছাড়া পাশ্চাত্য জগতের কাছ থেকে সমমর্যাদা পাওয়া যাবে না। তাই আত্মসম্মানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাপান পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের প্রতি আগ্রাসী মনোভাব গ্রহণ করে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে জাপান প্রকৃত ইউরোপীয় শক্তির মত চীনের সাথে চুক্তি সম্পাদনের দাবি জানিয়ে চীনা সাম্রাজের ভাগ নিতে চায়। দুবছরের মধ্যেই জাপান চীনকে লুচু দ্বীপ সমর্পণ করতে বাধ্য করে। পরবর্তী ধাপে জাপান রাশিয়ার সাথে এক চুক্তির দ্বারা কূলী দ্বীপের উপর সার্বভৌমিকতা ঘোষণা করে। পরিবর্তে রাশিয়ার দক্ষিণ সাখালিনের উপর আধিপত্য বজায় থাকল। এইভাবে জাপান আগ্রাসী মনোভাবের পরিচয় দিলে কোরিয়াকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ বাধে।
কোরিয়ায় জাপানের স্বার্থ দৃঢ়মূল ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে জাপান কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ উপলক্ষে চীনের সাথে একবার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। কিন্তু সেই যুদ্ধে জাপানকে চীনের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয়। কোরিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান চীন জাপান উভয়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোরিয়া উত্তর চীনের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ার জন্য চীনারা কোরিয়াকে তাদের বাইরের দেওয়াল মনে করত। মিং ও চিং সম্রাটদের রাজত্বকালে কোরিয়া চীনের করদ রাজ্য ছিল বলে সেখানে চীনের আধিপত্য বজায় ছিল।
১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে কোরিয়াবাসীরা চীনের কাছে কর প্রেরণ সম্পর্কিত মিশন ও জাপানের কাছে মাঝে মাঝে প্রতিনিধি প্রেরণ ছাড়া বিদেশীদের সাথে কোনরূপ যোগাযোগ রাখত না। বিদেশীদের কাছে কোরিয়া তাই সন্ন্যাসী রাষ্ট্র নামে পরিচিত হয়। কিন্তু কোরিয়ার ভৌগোলিক নৈকট্য জাপানের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল এবং জাপানের নিরাপত্তার জন্য কোরিয়ার স্বাধীনতা গ্রেট ব্রিটেনের নিরাপত্তার জন্য বেলজিয়ামের স্বাধীনতার চেয়েও বেশি প্রয়োজন ছিল। ইয়ালু নদী দ্বারা কোরিয়া মাঞ্চুরিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জাপানের ক্ষমতা কোরিয়ায় বিস্তৃত হলে জাপানের পক্ষে মাঞ্চুরিয়া দখল সহজ হবে।
অন্যদিকে কোরিয়ায় বিদেশী রাষ্ট্রের বিশেষত রাশিয়ার প্রধান্য বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা দিলে জাপান উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। কোরিয়ার উত্তর প্রান্তে রাশিয়ার ভ্লাডিভস্তক বন্দর অবিস্থত হওয়ায় রাশিয়ার কাছেও কোরিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল। কাজেই কোরিয়া জাপানের দ্বারা আক্রান্ত হলে রাশিয়ার পক্ষে জাপানকে বাধাদানের সম্ভাবনা ছিল। প্রতিপক্ষের কর্তৃত্বাধীন কোরিয়া তাই জাপানীদের চোখে প্রতীয়মান হত একটি বক্ষবিদ্ধ ছোরার মত (“a dagger thrust at the heart of Japan)।
কোরিয়া সম্পর্কে জাপানের আগ্রহের মূল কারণ অবশ্য অর্থনৈতিক। কোরিয়ায় ব্যাপক চাল উৎপাদন জাপানকে কোরিয়া বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। জাপানের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সরবরাহের বিস্তৃত ক্ষেত্র ছিল কোরিয়া। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তাই কোরিয়া জাপানের চাপে চাল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়। কোরিয়ায় ঊর্বর কৃষিক্ষেত্র ও চালের বাণিজ্য ছাড়াও জাপান খুব দ্রুত সেখানে জাহাজ পরিবহন ও বাণিজ্যিক স্বার্থ গড়ে তোলে।
১৮৯৪ সালে জাপান কোরিয়ার সমগ্র আমদানির ৪০ শতাংশ এবং নৌবাণিজ্য তার চেয়েও বেশি নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এইভাবে কোরিয়ায় জাপানের একটি বিকাশশীল বাজারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল. কোরিয়ায় জাপানের স্বার্থকে কেন্দ্র করে জাপানের বিদেশনীতিতে দুই গোষ্ঠীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। জাপানের আমলা গোষ্ঠীরা কোরিয়া সম্পর্কে যুদ্ধনীতি গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন না। অপরদিকে জাপানের সামরিক সদস্যরা কোরিয়ায় অভিযান পাঠানোর পক্ষপাতী ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোরিয়ায় একটি সমীক্ষক দল পাঠানো হয় যার আপাত উদ্দেশ্য সন্ধিস্থাপন থাকলেও প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করা। যাইহোক, ১৮৭৬ সালের ২৪শে ফ্রেব্রুয়ারী কোরিয়ার সাথে কাঙ্গওয়ার চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই সন্ধির প্রধান শর্তাদি হলঃ (১) কোরিয়াকে জাপান স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দান করে। (২) উভয় দেশের সঙ্গে দূত বিনিময় হয়, (৩) এবং ফুসান, ইনচোন ও ওনসন প্রভৃতি তিনটি বন্দরের উন্মুক্তি ঘটে।
বস্তুতপক্ষে কোরিয়ার সঙ্গে জাপানের এই চুক্তি জাপানের কূটনৈতিক সাফল্যের সাক্ষ্য বহন করে। কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদাদান নিঃসন্দেহে কোরিয়ায় চীনের বিশেষ অধিকারের অবসান ঘটিয়েছিল। এতদিন পর্যন্ত চীনের করদ রাজ্য ছিল কোরিয়া, স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ায় জাপান ও চীনের সমান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং চীনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। স্বাভাবিক ভাবেই চীন কোরিয়ায় জাপানের প্রভাব রোধ করতে সচেষ্ট হয়।
চীন কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সন্ধি স্থাপনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় যাতে সেখানে জাপানের প্রভাব রোধ হয়। এই উপলক্ষে চীনা ভাইসরয় লি হুং চ্যাং (Li Hung Chang) ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার নৌ কূটনীতিবিদ কমোডর সুফেণ্ট (R. W. Shufelt)-কে টিয়েন্টসিন পরিদর্শনের অনুরোধ জানান। চীনা ভাইসরয়ের মধ্যস্থতায় ১৮৮২ সালে আমেরিকার সাথে টিয়েন্টসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তী চার বছরে ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া ও ফ্রান্স কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এইভাবে কোরিও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে।
কোরিয়াকে কেন্দ্র করে ক্রমশ চীন-জাপান সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সংস্কার নিয়ে কোরিয়াতে দুটি দলের উদ্ভব ঘটে। জাপান প্রগতিমূলক সংস্কারপন্থী রানীর দলকে সমর্থন জানায়। অন্যদিকে তাইঊন-কুনের নেতৃত্বে রাজার আত্মীয়ের রক্ষণশীল দলকে চীন সমর্থন জানায়। চীন কোরিয়া সম্পর্কে দৃঢ় নীতি গ্রহণ করার জন্য চীনা নেতা ইউয়ান শি-কাই (Yuan Shi-Kai)-কে কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নজর দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করে।
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়ায় চীন ও জাপানীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে চীন ও জাপান উভয়েই কোরিয়াতে সৈন্য পাঠায়। শেষ পর্যন্ত জাপানী নেতা ইটো হিরোবুমির মধ্যস্থতায় উভয় দেশের মধ্যে টিয়েন্টসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় (১৮ই এপ্রিল, ১৮৮৫)। এই সন্ধির প্রধান শর্তাদি হল ঃ (১) উভয় দেশই কোরিয়া থেকে চারমাসের মধ্যে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেবে। (২) কোরিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয় এবং স্থির হয় চীন ও জাপান কোন দেশই কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবেনা। চীন-জাপান ছাড়া অন্য যে-কোন বিদেশী শক্তির তত্ত্বাবধানে কোরিয়ার সেনাবাহিনী পুনর্গঠিত করা যাবে। (৩) ভবিষ্যতে চীন-জাপান উভয় দেশ কোরিয়ায় সৈন্য পাঠানোর পূর্বে একে অপরকে লিখিতভাবে জানাবে।
চীন টিয়েন্টসিনের সন্ধিকে অগ্রাহ্য করে কোরিয়াকে আগের মতই করদ রাজ্য হিসেবে গণ্য করতে থাকে। ইউয়ান শি-কাইয়ের নেতৃত্বে চীন কোরিয়ায় শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা করে। জাপান চীনকে কোরিয়ায় শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ দেয় এই ভেবে যে চীন সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে কোরিয়াকে বিদেশীদের প্রভাব থেকে মুক্ত করবে এবং ইতিমধ্যে জাপান নিজেকে আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী করে তুলবে।
১৮৯৪ সাল নাগাদ জাপান চীনকে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক সামরিক সাজে প্রস্তুত। এই সময় জাপানী পক্ষের কোরিও নেতা কিন্ত্তক কিউনের হত্যা জাপানীদের রুষ্ট করে, কারণ কিমের হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কোরিয়ায় নিযুক্ত চীনা রেসিডেন্ট ও সামরিক প্রশিক্ষক ইউয়ান শি-কাই (Yuan Shi-Kai) যুক্ত ছিলেন। তাই জাপানীরা কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় থাকে।
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে টংহ্যাক্ (Tonghak) নামের একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী কোরিও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে জাপানের কাছে সেই সুযোগ উপস্থিত হয়। কনফুসীয় ধর্ম, তাও ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের নীতি ও আদর্শের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা টংহ্যাক সম্প্রদায়কে পৃথক ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে তারা বিদ্রোহের আশ্রয় নেয়। কোরিও সরকার এই বিদ্রোহ দমনে অক্ষম হওয়ায় চীনের সাহায্য প্রার্থনা করে। চীন জাপানকে এ বিষয়ে অবহিত না করেই কোরিয়ায় বিদ্রোহ দমনের জন্য ১৫০০ সৈন্য পাঠায়। চীন তার অভিসন্ধি জাপানকে আগে না জানিয়ে টিয়েন্টসিনের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করেছিল। কিন্তু জাপান চীনকে অবহিত করে কোরিয়ায় টংহ্যাক বিদ্রোহ দমনের জন্য ৮০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী পাঠায়। অনায়াসেই টংহ্যাক বিদ্রোহ দমন করা হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল বিদ্রোহ দমনের পর সৈন্য অপসারণ নিয়ে। জাপান চীনের সাথে যুক্তভাবে কোরিয়ায় সংস্কার করার জন্য চাপ দেয়। চীনা সরকার এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জাপানীরা এককভাবে সংস্কারের জন্য থাকতে চাইল। উভয়পক্ষের এই অনমনীয় মনোভাবের জন্য চীন-জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠল। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১ লা আগষ্ট জাপান চীনের কাওসিং (Kowshing) নামক সেনাবাহী জাহাজের উপর গোলা বর্ষণ করলে প্রথম চীন জাপান যুদ্ধ শুরু হয়।
• কেন চীন ছিল পরাজিত
চীন জাপান যুদ্ধে চীনের পরাজয়ের কারণ ছিল প্রভাবশালী শাসকের অভাব, যদিও ইউয়ান-সি-কাই মত সম্রাট ছিল তবুও বলা যায় যুদ্ধে সম্রাটের ভুল পদক্ষেপ চীনের পরাজয় কে তরান্তরিত করেছিল। লি বিদেশি শক্তির সহায়তা নিয়ে কোরিয়ার সংকটের সমাধান করতে চেয়েছিলেন। রাশিয়া চিনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি, আর ইংল্যান্ড দূরপ্রাচ্যে কোনো সংকটে জড়িয়ে পড়তে চায়নি, আমেরিকার শাস্তির আবেদনেও কাজ হয়নি। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই জাপান চিনের কাউশিং জাহাজ ডুবিয়ে দিলে ৯৫০ জন চিনা প্রাণ হারায়, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট দুই পক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। চিনের স্থল ও নৌবহর যুদ্ধে কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি। চিনা সৈন্যবাহিনী পরাস্ত হয় ।
এই যুদ্ধে চীন জাপানের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত শিমোনোসেকির সন্ধি (Treaty of Shimonoscki, ১৭ই এপ্রিল ১৮৯৫) স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীন-জাপান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই সন্ধির শর্তগুলি হলঃ (১) চীন কোরিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। (২) চীন যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ জাপানকে ২০০ মিলিয়ন টেইল দেয়। (৩) চীন দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়ার লিয়াওটুং উপদ্বীপ, ফরমোজা ও পেসকাডোর্স দ্বীপপুঞ্জ জাপানকে অর্পণ করে। (৪) চীন জাপানকে বাণিজ্যিক সুবিধা প্রদানের জন্য শাসি (Shasi), চুংকিং (Chung king), হ্যাংচাও (Hangchow) এবং সুচাও (Soochow) এই চারটি বন্দর উন্মুক্ত করে। (৫) জাপানী নাগরিকদের চীনে শিল্প কারখানা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। (৬) শোগুন যুগে স্বাক্ষরিত বৈষম্যমূলক চুক্তিগুলির পরিবর্তন করতে বিদেশী রাষ্ট্রগুলি সম্মত হয়। (৭) এতদিন পর্যন্ত বিদেশীরা জাপানে যে অতিরাষ্ট্রিক অধিকার ভোগ করে আসছিল, তার অবসান ঘটে। (৮) জাপান বাণিজ্যে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ শুল্ক নিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরে পায়।