StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

পল্লব যুগের মন্দির শিল্প রীতি সম্পর্কে আলোচনা করো

 

পল্লব যুগের মন্দির শিল্প রীতি সম্পর্কে আলোচনা করো

ভূমিকা:

গুপ্তযুগে অবসানের পর ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলের পূর্বদেশে পল্লব রাজাদের আনুকূল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক মহৎ শিল্পকলার সৃষ্টি হয়েছিল। ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দীর মধ্যে পল্লব-স্থাপত্য ও ভাস্কর্যকীর্তিগুলি রচিত হয়। পল্লব আমলে ধর্মীয় জাগরণের বিশেষ প্রভাব পড়েছিল স্থাপত্য শিল্পকলায়। তবে এর মধ্যেও একটা বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মূলত পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চীপুরম ও অন্যান্য স্থানের মন্দির ছাড়াও মামেল্লপুরম (মহবলীপুরমে) বহু মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরগুলি নির্মাণে স্বকীয়তা ছিল, কিন্তু এগুলি আকস্মিকভাবে নির্মিত হওয়া সম্ভব ছিল না। বলাবাহুল্য, শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

পল্লব আমলে দক্ষিণ ভারতে মন্দির নির্মাণে দ্রাবিড় শিল্পরীতির স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্রাবিড় রীতির বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল যথাক্রমে পিরামিড আকারের ‘বিমান’, ‘মণ্ডপ’, ‘নন্দীমণ্ডপ’ ও ‘গোপুরম’। তবে পল্লবদের মন্দির নির্মাণরীতিতে বিভিন্ন শাসকদের আমলে নানা বৈশিষ্ট্য যুক্ত হয়।

পল্লব যুগের মন্দির শিল্প রীতি

পল্লব মন্দির নির্মাণ রীতির কতগুলি স্তর লক্ষ্য করা যায়—১। প্রথম মহেন্দ্রবর্মনের (৬০০-৬২৫ খ্রিস্টাব্দ) আমলে ‘মহেন্দ্র রীতি’, ২। প্রথম নরসিংহবর্মনের আমলে (৬২৫-৬৭৫ খ্রিস্টাব্দ) ‘মহামল্ল’ বা ‘নামেপ্ল রীতি’, ৩। দ্বিতীয় নরসিংহবর্মনের (রাজসিংহ) আমলের ‘রাজসিংহ রীতি’ (আনুমানিক ৭০০-৮০০ খ্রিস্টাব্দ), ৪। অপরাজিত পল্লবের আমলে ‘অপরাজিত রীতি’ বা ‘নন্দীবর্মণ রীতি’ বা নন্দীবর্মন গোষ্ঠীর আমলে ‘নন্দীবর্মন রীতি’ (আনুমানিক ৮০০-৯০০ খ্রিস্টাব্দ)। পল্লবযুগের একধরনের মন্দির পাহাড় কেটে তার ভিতরে নির্মিত হয়। প্রথম দুটি মন্দিরশৈলীর ক্ষেত্রে এই ধরনের মন্দির লক্ষ্য করা যায়। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রস্তর মন্দির নির্মিত হয় শেষ দু’টি রীতির সময়কালে।

মহেন্দ্ররীতি :

মহেন্দ্ররীতির বৈশিষ্ট্য হল পাহাড় কেটে তার ভিতরে পাথর খোদাই মন্দির নির্মাণ করা। কৃষ্ণা, গুন্টুর, নেলোর, ত্রিচিনাপল্লী অঞ্চলে কয়েকটি পাহাড়ের গা খোদাই করে প্রথম মহেন্দ্রবর্মন এইরূপ মন্দির নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের ছাদটি ধরে রাখা হত ত্রিকোণ অথবা গোলাকার স্তম্ভ বা থামের দ্বারা। মহেন্দ্ররীতির মন্ডপগুলি ছিল কেবলমাত্র স্তম্ভসারিযুক্ত বৃহদায়তন কক্ষ। মন্ডপের পিছনের প্রাচীর সংলগ্ন অঞ্চলে ছিল একবা একাধিক গর্ভগৃহ বা দেবস্থান। স্তম্ভের দন্ডভাগের অংশগুলি বর্গাকার। মধ্যভাগে বর্গাকার কোণগুলি গোল করে কেটে অষ্টকোণাকৃতি করা হয়েছিল। স্তম্ভের সঙ্গে যুক্ত ‘ব্র্যাকেট’ (নাগদন্ড) স্তম্ভশীর্যের কাজ করে। প্রথম স্তম্ভের উপর কোনো কার্নিশ লক্ষ্য করা না গেলেও পরের দিকে এগুলিতে বেলনাকার অলঙ্করণ যুক্ত করা হয়। বেলনাকার কার্নিশের মাঝে মাঝে এক ধরনের অলঙ্করণ যুক্ত করা হয়েছিল। এগুলি বৌদ্ধ-চৈত্যগৃহের গবাক্ষের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের মত ছিল। দক্ষিণাঞ্চলে এইরূপ স্তম্ভ অলঙ্করণ ‘কুডু’ নামে পরিচিত ছিল।

প্রথম মহেন্দ্রবর্মনের আমলে যেসব পাথর খোদাই মন্দির এই রীতিতে নির্মিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তোল্ডাইমন্ডলমের গুহামন্দির, দক্ষিণ আর্কট জেলার মন্ডগপত্তুর গুহা-মন্দির। উত্তর আর্কট জেলায় মামন্দুরে দু’টি ও শিয়ামঙ্গলমে একটি, তিরুচিরাপল্লীতে একটি বৃহৎ মন্দির এবং তিরুব্ধলুকুনুরের কাছে বল্লমে একটি মন্দির। তিরুচিরাপল্লীর মন্দিরটি মহেন্দ্ররীতিতে নির্মিত শ্রেষ্ঠ মন্দির। এই মন্দিরের একটি লেখতে রাজা মহেন্দ্রবর্মনের জৈন ছেড়ে শৈব ধর্মের উল্লেখ আছে। মহেন্দ্রবর্মনের সময় কাঞ্চির একামবরেশ্বরের স্তম্ভগুলিও মহেন্দ্রশৈলীর অনুরূপ।

মহেন্দ্রবর্মনের সময় নির্মিত উত্তবল্লীর অনন্তশায়ন মন্দির ও ভৈরবকান্ড মন্দির দু’টিতে আবার কিছুটা বৌদ্ধবিহারের ছাপ রয়েছে। এদের স্তম্ভের ডিজাইন পূর্বের মন্দিরগুলি থেকে আলাদা। অনন্তশায়নের মন্দিরটি চারতলা। ভৈরবকান্ডের মন্দিরটিও চারতলা; স্তম্ভযুক্ত মন্দিরগুলি একের পর এক করে সাজিয়ে ৫০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট করা হয়েছে। বহির্ভাগে স্তম্ভের মূলদেশ ও শীর্ষদেশের মাঝখানটি ক্রমশ সরু হয়ে অষ্টকোণী আকার ধারণ করেছে। স্তম্ভের নীচের ভাগে একটি উপবিষ্ট সিংহমূর্তি রয়েছে। এই নতুন ধরনের পরিকল্পনা পরে আরো অনেক বেশি মার্জিত হয়ে পরিপূর্ণ দ্রাবিড় রীতিতে আত্মপ্রকাশ করে।

মহামল্ল বা মামেল্ল রীতি : 

মহামল্ল বা মামেল্ল রীতির বৈশিষ্ট্য হল গ্রানাইট পাথরে পাহাড় কেটে একটি পাথরখণ্ডে রথের আকারে মন্দির নির্মাণ। এটি তাই ‘একশিলা শৈলী’ বা ‘রথশৈলী’ নামেও পরিচিত। মহামল্ল রীতিতে আরেক ধরনের পাথর-খোদাই মন্দির নির্মিত হয়, যার মণ্ডপ আগের তুলনায় উন্নত।

মহাবলীপুরমে নির্মিত মণ্ডপ আকারের পাথর-খোদাই মন্দির সাধারণভাবে ‘মণ্ডপ’ নামে পরিচিত। মামেল্লপুরামের দু’মাইল উত্তরে সলুভনকুক্কুম নামক একটি গ্রামে দুটি এই ধরনের মন্দির পাওয়া গেছে। এগুলি মহিষমর্দিনী, আদিবরাহ, ত্রিমূর্তি প্রভৃতি দেবদেবীর পাথর-খোদাই মন্দির।

মহাবলীপুরমের মন্দিরগুলিতে ‘মণ্ডপ’ নির্মাণ-পদ্ধতিতে মাহেন্দ্ররীতির তুলনায় কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। মণ্ডপগুলি বৃহদায়তন নয়। এগুলির আয়তন মোটামুটিভাবে—সামনের বহির্ভাগ ২৫ ফুট চওড়া, উচ্চতা ১৫-২০ ফুট, গর্ভগৃহসহ গভীরতা ২৫ ফুট, স্তম্ভগুলির উচ্চতা ৯ ফুট, পার্শ্বদেশ ১-২ ফুট। এই মন্দিরগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য এর স্তম্ভগুলি। এগুলির উপরে বেলনাকার কার্নিশের সামনের অলঙ্করণ ‘কুডু’ নামে পরিচিত। কার্নিশের ধার ঘেঁষে থাকে ছোটো ছোটো মন্দির দ্বারা নির্মিত নীচু পাঁচিল। স্তম্ভগুলি ভাস্কর্য দ্বারা অলঙ্কৃত। স্তম্ভের মূল দন্ডভাগের উপস্থাপন, স্কন্ধভাগের (তড়ি) সুষমা, সুন্দর তরমুজের আকারবিশিষ্ট শীর্ষদেশ (কুম্ভ) ও এর পদ্মের আকৃতি (ইদল) এবং শীর্ষদেশের পীঠিকার (পলগই) প্রশস্ততা—এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে পল্লবশৈলীর প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।

মহাবলীপুরমের রথমন্দির বা একশিলা মন্দির (সপ্তরথ মন্দির বা সেভেন প্যাগোডা)-গুলি কেবলমাত্র একটি পাথরের স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান। এগুলির কয়েকটির মধ্যে দ্রাবিড় রীতির স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের মন্দিরের সংখ্যা আটটি। এগুলি শৈবধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। আটটি রথের মধ্যে দক্ষিণে রয়েছে দ্রৌপদী, অর্জুন, ভীম, ধর্মরাজের নামে নামাঙ্কিত রথ। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রথগুলি গণেশ, পিড়ারি ও বলাইয়াকুট্টই-র নামে পরিচিত। রহগুলি বৃহৎ নয়—দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট, উচ্চতা ৪০ ফুট। দ্রৌপদী নামাঙ্কিত রথটি (চারকোণা) কুটিরের অনুকরণে নির্মিত একটি কক্ষযুক্ত। এর ভিতরে ভার বহন করে ছাড়া ছাড়া করে নির্মিত সিংহ ও হস্তীমুর্তি। এছাড়া সবগুলির ক্ষেত্রেই কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। রথগুলি  চৈত্য ধরনের এক বা একাধিক তলবিশিষ্ট। বাইরের দেওয়ালগুলির প্রাচীরের গা থেকে আংশিক প্রলম্বিত চতুষ্কোণ স্তম্ভ এবং ভাস্কর্যসম্পন্ন কুলুঙ্গী দেখা যায়। ওপরের তলাগুলিতে বাইরের দিকে ছোটো চাতাল রাখার প্রবণতা রয়েছে।

রথগুলি আয়তাকার ও বর্গাকার দু’ভাবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। আয়তাকার ভীম ও গণেশ রথ দু’টি সম্প্রসারিত পিপার মধ্যে রক্ষিত ধনুকের আকৃতির ছাদযুক্ত। গণেশ রথের প্রবেশপথ একটি স্তম্ভসারির মধ্য দিয়ে প্রসারিত। এটি আয়তাকার, তলগুলি উপরের দিকে ক্রমশ ছোটো হয়ে যায়। ‘কলস’ বা শিখরযুক্ত ছাদটি পিপাকৃতি এবং ছাদের প্রান্তস্থ দেওয়াল ত্রিকোণ বিশিষ্ট। এই বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তীকালে মন্দিরের প্রবেশপথ গোপুরমের নক্সা তৈরিতে সহায়ক হয়। নকুল, সহোদেবের আয়তাকার রথটি অনেকটা চৈত্যগৃহের মত। একদিক অর্ধ-বৃত্তাকার। এই আকৃতি ‘গজপৃষ্ঠ’ নামে পরিচিত।

বর্গাকার রথদু’টির (ধর্মরাজ ও অর্জুন রথ) উপরিভাগ পিরামিড আকৃতির। ধর্মরাজ রথের একতলা বর্গাকার এবং এর চারদিকের স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান খোলা বারান্দা রয়েছে। একতলার উপরে একটি পিরামিড জাতীয় গম্বুজ উঠে শেষপর্যন্ত একটি স্তুপিকার আকার নিয়েছে। এর ভিতটি অলঙ্কৃত। এর সামনে সিংহচিহ্নিত স্তম্ভশ্রেণি সৌধটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছে। লক্ষণীয়, বর্গাকার ও আয়তাকার রথগুলি মধ্যে দ্রাবিড় রীতির প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য যথা—’বিমান’ ও ‘গোপুরম’-র সূচনা লক্ষ্য করা যায়। বলা যায়, রথমন্দিরের নির্মাণের মধ্য দিয়েই মন্দির-স্থাপত্যে দ্রাবিড় রীতির যে বিকাশ ঘটে সেই ধারা সপ্তদশ শতক পর্যন্ত বজায় ছিল।

রাজসিংহ রীতি :

রাজসিংহ রীতিতে পাহাড় খোদাই করে মন্দির নির্মাণ না করে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মন্দির নির্মাণ করা হয়। মহাবলীপুরমে এইধরনের মন্দির তিনটি (তির মন্দির, ঈশ্বর মন্দির ও মুকুন্দ মন্দির), কাঞ্চীপুরমে দুটি (কৈলাশনাথ ও বৈকুণ্ঠ পেরুমল মন্দির) এবং দক্ষিণ আর্কট জেলার পনমলইয়ে অবস্থিত তলগিরিশ্বর মন্দির। এই মন্দিরগুলির স্থাপত্য দ্রাবিড় রীতির আদি-পর্বের গঠনকে চিহ্নিত করে।

মহাবলীপুরমের তীরমন্দির :

এই মন্দিরটি সমুদ্রের তীরে অবস্থিত হওয়ায় এর এইরূপ নামকরণ করা হয়েছে। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের শেষভাগে নির্মিত এই মন্দিরটি মসৃণ পাথরে নির্মিত প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। প্রধান বড় মন্দিরটির (শৈব মন্দির) গর্ভগৃহ সমুদ্রের দিকে মুখ করা এবং সমুদ্র তীরবর্তী। এর বিশালাকার প্রাচীরের মধ্যবর্তী মন্দির সংলগ্ন মুক্ত অঙ্গনটির প্রবেশপথ পশ্চিমদিকে যুক্ত। এর পশ্চিমদিকে পাশাপাশি দুটি মন্দির অসামঞ্জস্য ভাবে যুথবদ্ধ। এর একটিতে ক্ষুদ্রাকার একটি ‘বিমান’ আছে। এটিকে প্রথম দর্শনে প্রবেশপথ বলে মনে হয়। পশ্চিমদিকের মন্দিরদুটি তুলনায় ছোটো (বিষ্ণুমন্দির)। দুটি মন্দিরেই স্তূপিকা ও কারুকার্যসহ পিরামিডের মত গম্বুজ রয়েছে। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, একশিলা স্তম্ভবিশিষ্ট ধর্মরাজ রথমন্দির এবং তীরমন্দিরের পরিকল্পনা এক পর্যায়ের। কেননা, দুটিতেই মন্দিরের নীচের তলা চতুর্ভূজ বা বর্গাকার এবং উপরে একেবারে শেষের স্তরে পিরামিডের মত গম্বুজ রয়েছে।

কাঞ্চীপুরমের কৈলাশনাথ মন্দির :

কাঞ্চীপুরমের কৈলাশনাথ মন্দির (শৈবমন্দির) রাজসিংহ রীতির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। কৈলাশনাথ মন্দিরে দ্রাবিড় জাতীয় মন্দিরের চারটি উপকরণ ‘বিমান’, ‘মণ্ডপ’, ‘গোপুরম’ এবং মন্দিরের চারপাশে উত্তশ্রেণি’ ও ‘কক্ষ’ সবকটিই আছে। এই মন্দিরের পরিকল্পনা এইরূপ—একটি গর্ভগৃহ, পিরামিডাকৃতির ‘বিমান’, প্রশস্থ ছাদসহ একটি মণ্ডপ বা স্তম্ভযুক্ত হলঘর। সমগ্র এলাকার চারদিকে খোলা ‘প্রাঙ্গন’, প্রাঙ্গনটি আয়তাকার প্রাচীরবেষ্টিত, যা ছোটো ছোটো কক্ষদ্বারা নির্মিত হয়। মন্দিরটির চারদিকে রথ আকৃতিবিশিষ্ট ‘দেবগৃহ’ বা ‘গর্ভগৃহ’ রয়েছে। পরবর্তীকালে মণ্ডপ ও গর্ভগৃহ একটি ‘অর্ধ-মণ্ডপ’ দ্বারা যুক্ত করা হয়। এর পশ্চিম দিকে প্রায় পূর্বদিক মুখ করে একটি সৌন্দর্যমন্ডিত গম্বুজ রয়েছে। মন্দিরটির স্তম্ভগুলি সিংহমূর্তির উপর স্থাপিত। কৈলাশনাথ মন্দিরটির ভিত্তিগ্রানাইট পাথরের দ্বারা নির্মিত হয় এবং উপরের সৌধতে ভাস্কর্য রূপায়ণের জন্য বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়।

কাঞ্চীর বৈকুণ্ঠ পেরুমল মন্দির :

এই মন্দিরটি অট্টালিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত স্থানে অবস্থিত। মন্দিরের অঙ্গগুলি, আচ্ছাদিত স্থানগুলি, সামনের স্তম্ভশ্রেণি এবং গর্ভগৃহ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। বর্গাকৃতি গর্ভগৃহের পাশগুলি ৯০ ফুট এবং এর সামনের ভাগ স্তত্তশ্রেণিকে যুক্ত করার জন্য পূর্বদিকে ২৮ ফুট প্রসারিত করা হয়েছে। সমগ্র কাঠামোটি সুদৃশ্য অলঙ্কৃত প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। প্রাচীরের ভিতরে প্রদক্ষিণ পথ এবং আচ্ছাদিত স্থান (সমান ব্যবধানে সিংহ চিহ্নিত স্তত্তশ্রেণির সঙ্গে যুক্ত)। মাঝে মাঝে আংশিক প্রলম্বিত স্তম্ভ ও কুলুঙ্গী নির্মাণ করা হয়েছে। ভিতরে রয়েছে—’অন্তর্দেশ’ ও ‘মণ্ডপ’। মন্দিরের ‘বিমান’টি চারতলা, বর্গাকার। এর পার্শদেশের মাপ ৪৭ ফুট, উচ্চতা ৬০ ফুট। বিমানের প্রত্যেক তলে একটি করে প্রদক্ষিণ পথ আছে।

অপরাজিতা রীতি বা নন্দীবর্মণ রীতি :

নন্দীবর্মনগোষ্ঠীর আমলে (আনুমানিক ৮০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ) নির্মিত মন্দিরগুলিও স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। তবে এগুলির আকার ছোটো এবং এই সময়ের মন্দিরের সংখ্যাও কম। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাঞ্চীপুরমের মুক্তেশ্বর মন্দির ও মাতঙ্গেশ্বর মন্দির, চিলেংপ্টের কাছে ওরপডম গ্রামের বাড়ামল্লিশ্বেরের মন্দির এবং অরকমের বীরত্তানেশ্বরের মন্দির। কাঞ্চীপুরমের মন্দির দুটি উল্লেখযোগ্য। পরের তিনটি মন্দির মামেল্লপুরমের সহদেব রথ মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত হয় বলে অনুমান করা হয়। তবে এই পর্যায়ের সব পল্লব মন্দিরেই অবনতির ছাপ স্পষ্ট।

পল্লব মন্দির স্থাপত্য–  মূল্যায়ন : 

পল্লব মন্দির স্থাপত্যে দ্রাবিড় রীতির বিবর্তনের ধারা লক্ষ্য করা যায়। পল্লব আমলে নির্মিত কাঞ্চীপুরমের কৈলাশনাথ মন্দির এবং চালুক্যদের আমলে বীরুপাক্ষ মন্দির দ্রাবিড় রীতির বিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্তর বলে বিবেচিত হয়। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রকূটদের নেতৃত্বে এবং দক্ষিণ ভারতের চোলদের নেতৃত্বে দ্রাবিড় রীতি আরো বলিষ্ঠ ও বিকশিত রূপ লাভ করে।

Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *