যোগীমারা গুহা কোথায় অবস্থিত? এই গুহার চিত্রবলী ও অন্যান্য শিল্পনিদর্শনের বর্ণনা দাও।
মধ্যপ্রদেশের সুরগুজায় রামগড় পাহাড়ে যোগীমারা গুহার অবস্থান। এখানে একাধিক গুহার মধ্যে চারটিতে প্যানেলবদ্ধ চিত্রকর্ম চোখে পড়ে, বাকিগুলি অস্পষ্ট। তবে চিত্রগুলি খুব উন্নতমানের, একথা বলা যায় না। বরং কল্পজীবনধর্মী ছবিগুলির বিষয়বস্তুর মধ্যে কিছুটা নতুনত্ব ফুটে ওঠে। ছবিগুলির প্যানেল ভাবনার ধারনা ছন্দহীনতার কারণে নয়, একথা বলাই বাহুল্য। ছবিগুলিতে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রভাব লক্ষ্যণীয়। একটি প্যানেলের ছবিতে মাথার উপরে ছত্রশোভিত তিন-ঘোড়ায় টানা দু’চাকার রথ, ভারতের সাঁচীস্তূপের কথা ছাড়াও বৌদ্ধভাবনার মূর্ছনা এনে দেয়। অন্য প্যানেলের ছবিতে নগ্ন পুরুষ মানুষের ছবিগুলি জৈনধর্মের প্রচ্ছনতাকেই স্পষ্ট করে।
যোগীমারার চিত্রযুক্ত চারটি প্যানেলের মধ্যস্থানের একটিতে একজন পুরুষ গাছের তলায় উপবিষ্ট, বাঁদিকে নর্তকী ও বাদ্যকারের দল, অন্যদিকে হাঁতিসহ শোভাযাত্রার ছবিটি দর্শককে দারুণভাবে পরিতৃপ্ত করে। অন্যএকটি প্যানেলের অর্ধাংশের প্রথমভাগে ঘোড়া, ফুল, বস্ত্রপরিহিত মানুষের ছবি এবং অন্য অর্ধাংশে গাছের ডালে পাখির কাছাকাছি উলঙ্গ শিশুর আরোহণ এবং গাছের তলায় খোঁপাযুক্ত কেশবিন্যাসে একদল নগ্ন মানুষের ছবি—ভারতীয় শিল্পরসিকদের শ্রীকৃষ্ণের বস্ত্রহরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
চতুর্থ কক্ষ বা প্যানেলের অন্তর্ভাগে একজন নগ্ন মানুষকে ঘিরে তিনজন মানুষ, একটু দূরে দু’জন মানুষকে ঘিরেও তিনজন মানুষ এবং এদের নীচে একটি বাড়ির সামনে একটি হাতিকে ঘিরে তিনজন মানুষের ছবি ও তার কাছেই ছত্রযুক্ত তিন-ঘোড়ায় টানা রথের ছবি দর্শকের ভাবনাকে উৎসাহ যোগায়।
যোগীমারার গুহাচিত্রে মানুষের ছবিসহ হাতি, ঘোড়া, পাখি ও গাছপালার সব ছবিগুলিই লাল রঙে আঁকা। কখনো কখনো এগুলি কালো রঙের বন্ধনীতে আবদ্ধ করা হয়েছে। যোগীমারার চিত্রাবলীতে জ্যামিতিক বিন্যাসের উজ্জ্বল প্রমাণ পাওয়া যায়। চিত্রশিল্পের পাশাপাশি কিছু চিত্রলিপিরও সন্ধান পাওয়া গেছে।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে যোগীমারার গুহাগুলি চিত্রিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যোগীমারার গুহাচিত্রগুলি ভারতীয় সংস্কৃতির পরম্পরাকে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ করেনি; বরং আরো মূল্যবোধযুক্ত ধারনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। অনেকের মতে, এই গুহাচিত্রগুলি অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্রের পূর্ব-প্রস্তুতি মাত্র।