তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
বিশ্বের সকল প্রাপ্ত থেকে জ্ঞান এবং তথ্য সংগ্রহ এবং তার সংরক্ষণ, আঞ্চলিক ভিত্তিতে জ্ঞান বা ধারণার উদ্ভাবন এবং তার প্রসার ঘটানো, সঞ্চিত জ্ঞান এবং তথ্যকে মনবসম্পদ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সভ্যতার সার্বিক বস্তুগত উন্নতিতে ব্যবহার করা এই প্রক্রিয়ার সামগ্রিক নামই হল তথ্যপ্রযুক্তি।
বর্তমান বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির সার্বিক প্রভাব এতটাই বেশী যে এই ‘magical technology কেবলা হচ্ছে second industrial revolution | তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কতকগুলি অভিনব বৈশিষ্ট্য একে স্বতন্ত্র্য্য করে তুলেছে। দক্ষ হাত এবং যুক্তিনিষ্ঠ মননের সমন্বয়ে গঠিত, অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীলতা, অতি আধুনিক পরিকাঠামো, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ নিয়োগ পরিকাঠামোর দিগন্ত উন্মোচন এই শিল্পকে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র শিক্ষিত যুবসমাজের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। কম্পিউটার, সফট ওয়্যার হার্ডওয়্যার, ই কমার্স, ই বিজনেস বা ই বিজ, ইন্টারনেট, টেলিকমিউনিকেশন, মাইক্রোইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মাধ্যমে নলেজ ম্যানেজমেনট করা তথ্যপ্রযুক্তি মূল কাজ।
তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত হল অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। সাধারণভাবে ইন্টারনেট এমন একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যেই নেটওয়ার্ক পৃথিবীর সব থেকে বড়ো এবং ব্যস্ত। বিশ্বের সব কম্পিউটার গুলি যেই নেটওয়ার্ক দ্বারা একে আরেকটির সাথে সংযুক্ত হয়ে আছে, সেই নেটওয়ার্কটি হলো ইন্টারনেট।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রধান চালিকা সফট ওয়্যার শিল্প যা ক্রমপ্রসারমান। মাইক্রোসফট, এ্যাসাল প্রভৃতি কোম্পানিগুলি তাদের প্রযুক্তিকে ক্রমাগত সময়োপযোগী এবং আধুনিক করে ভুলছে, সফট ওয়্যারের ব্যবহার এবং প্রযোগকৌশলও ক্রমশ সহজবোধ্য হচ্ছে। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশের যুবসমাজ তাদের ‘brain power ‘কে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করে আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ পশ্চিমী দেশগুলিতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ভালো মাইনের কাজ পাচ্ছে যাকে বর্তমানে বলা হচ্ছে ‘outsourcing ।
অন্যদিকে সফট ওয়্যার সংস্থা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত কোম্পানীগুলি (যেমন উইপ্রো, টাটা ইনফোসিস, টটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ইত্যাদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের নিযোগ করে বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে নিজেদের মূলধন ও সুনাম বাড়াচ্ছে। NASSCOM McKinsey প্রদত্ত হিসাবানুযায়ী ১৯৯৭-৯৮ সালে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মোট অর্থলগ্নীর পরিমাণ ২৭২ মিলিয়ান ডলার, ২০০৮ সাল নাগাদ যা বেড়ে হতে পারে ১৯২২ মিলিয়ান ডলার। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের অপর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্টারনেট’র ক্ষেত্রেও এই ব্যাপক বিকাশের হার লক্ষণীয় ১৯৯৬ সাল নাগাদ ৪০ মিলিয়ানের কম মানুষ নেট ব্যবহার করতেন, এখন প্রত্যহ ১.৫ লক্ষ মানুষ নেটে যোগ দিচ্ছেন।
১৯৯৯ সালের শেষ দিকে মোট ওয়েব পেজের সংখ্যা ছিল ১৫০০ মিলিয়ান, ২০০১ সাল নাগাদ তা বেড়ে হয় ৮০০০ মিলিয়ান, এখন দৈনিক ১.৯ মিলিয়ান ওয়েব পেজ তৈরী হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা সংক্রান্ত ৩০০০ মিলিয়ান ই মেল আদান প্রদান হয়েছিল, ২০০১ সালের পর থেকে ঐ দেশের বাণিজ্যিক চিঠি পত্র আদান প্রদানের মোট ৯০% ই মেলের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৯ সালের হিসাবানুযায়ী ১.৫ লক্ষ কল সেন্টারে ৯০ লক্ষ মানুষ কাজ করত। উপরোক্ত তথ্যগুলিই তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবকে প্রমাণ করে।
বর্তমানে ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে সকল বহুজাতিক সংস্থা মূলধন নিযোগ করেছে বা তাদের কেন্দ্র গড়ে তুলেছে সেগুলি হল আই. বি.এম. মাইক্রোসফট, নোভেল, ওরাকেল, কমপিউটার এ্যাসোসিয়েটস, সিসকো, লুসেনট, মটোরোলা, বান, এসার, কমপ্যাক, এইচ পি প্রভৃতি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি উপত্যকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির ৪০% কাজ ভারতীয় এন আর আই রা অধিকার করে রেখেছেন, এই সহস্রাব্দের গোড়ায় তাদের মোট আয় ছিল ৬০ বিলিয়ান ডলার (২,৭০,০০০ কোটি টাকা)। মাইক্রোসফটের ৩৫%, আই বি এমর ২৮%, সিসকোর ২৫% এবং ইনটেলের ১৭% সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ভারতীয়। এই পেশার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর যে পরিমাণ ভিসা প্রদান করে তার ৪০% ভারতীয়দের দেওয়া হয়।
ভারতে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি লক্ষ্য করে মাইক্রোসফট অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে তাদের কেন্দ্র স্থাপন করেছিল, এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে স্থাপিত তাদের প্রথম কেন্দ্র। অধুনা কোলকাতার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ, ব্যাঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লী প্রভৃতি নগরে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে যেগুলিতে অসংখ্য ইঞ্জিনিয়ার কর্মরত।
ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অতি দ্রুত গতিতে ক্রমবর্ধমান। ২০০১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫ মিলিয়ান, ২০০৩’র মার্চে তা হয়ে যায় ১৮ মিলিয়ান। এখন নেটের মধ্যে দিয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, রেলের ও বিমানের টিকিট পাওয়া যায়, পুরসভার কর মেটানো যায়, টেলিফোনের বিল জানা যায় ও মেটানো যায়, ব্যাঙ্কের লেনদেন করা যায়, এমন কি পণ্যও ক্রয় করা যায়। তথ্য বিপ্লবের এই যুগে তথ্য জানার অধিকার ভারতের মত অনেক রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে।