মৌর্য যুগের দরবারী শিল্পকলার ওপর একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
মৌর্য শিল্পকলার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কাঠ বা দুর্বল উপাদানের পরিবর্তে শিল্প সৃষ্টিতে স্থায়ী উপাদান হিসেবে পাথরের বহুল ব্যবহার। এইরূপ স্থায়ী শিল্প সৃষ্টিতে আগ্রহী সাম্রাজ্যবাদী মৌর্য শাসকদের দূরদর্শীতার পরিচয় বহন করে। মৌর্য সম্রাটগণ বৃহৎ শিল্প নির্মাণে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেন।
মৌর্য শিল্প নিঃসন্দেহে ছিল ‘দরবারী শিল্পী’। সমস্ত স্তম্ভগুলিতে সমান মসৃণতা এবং খোলা উদার পরিবেশে এগুলি স্থাপনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে মৌর্য দরবারী শিল্পের ইঙ্গিত বহন করে। মৌর্য শিল্পকলা ছিল জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ। নীহাররঞ্জন এপ্রসঙ্গে সারনাথ স্তম্ভের নীচে পিঠে পিঠ দিয়ে চারটি সিংহমূর্তির উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এগুলির মধ্যে অশোকের আত্মম্ভরীতা প্রকাশ পেয়েছে। আবার ঐ চারটি সিংহের মূর্তির নীচে সারনাথের স্তম্ভ মঞ্চে হাতি, অশ্ব, বৃষ ও সিংহ—এই চারটি মূর্তির আবির্ভাবের ভঙ্গিমায় অশোকের নমনীয়তা ফুটে ওঠে।
ধৌলি পাহাড়ে (কলিঙ্গ প্রদেশে) খোদিত অলস, মার্জিত, বিনয়ী, স্থিতধী হাতির মূর্তিটির মাধ্যমেও অশোক কলিঙ্গ রাজার কাছে তার শান্তরূপটি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন বলে নীহাররঞ্জন রায় মতপ্রকাশ করেছেন। একদিকে বিনয়, শান্তভাব এবং অন্যদিকে আভিজাত্য ও আড়ম্বর—এই দুইভাবের সংমিশ্রণে সৃষ্ট অশোকের আমলের মৌর্য শিল্প নিঃসন্দেহে ছিল ‘মৌর্য যুগের দরবারি শিল্পকলা’। এগুলির বিষয়বস্তু ছিল নিশ্চিতভাবে অশোক কর্তৃক উদ্ভাবিত।