StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ

প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখ।

প্রাচীন রোমের সমাজ ব্যবস্থায় দাস ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোমে যুদ্ধবন্ধিদের দাসে পরিণত করা হতো। তাছাড়া জলদস্যু ও ব্যবসায়ীরা ভিনদেশ থেকে বন্দী মানুষদের রোমের বাজারে দাস হিসেবে বিক্রি দিত, এদের ক্রীতদাস বলা হত। রোম ছাড়াও ইতালির অন্যান্য নগর গুলিতেও দাস বাজারের পরিচয় পাওয়া যায়। ধনী রোমানদের বড় বড় কৃষি খামার ছিল যেখানে প্রায় সব কাজকর্মে জন্যেই দাসদের নিযুক্ত করা হতো। অনেক সময় ক্রীতদাসদের কর দেওয়া নেওয়া ও ব্যবস্থা ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা ছিল অমানুষিক অত্যাচারের নামান্তর।

কৃষিকাজ ছাড়াও সামুদ্রিক বাণিজ্যে মানুষদের দাঁড় টানা এবং মালপত্র ওঠানো নামানোর জন্য দাসদের ব্যবহার করা হতো। খনির কাজেও দাসদের বিশেষ প্রয়োজন ছিল। দাসদের সংখ্যাও ছিল অভিজাত্য নির্ণয়ের মাপকাঠি। বেশি সংখ্যক দাস মালিকরা সমাজের বিশেষ সম্মানিত ছিলেন।

সাধারণত যুদ্ধবন্দীরা রাষ্ট্রীয় দাসে পরিণত হতো। রাষ্ট্রের অধীনস্থ খনি অস্ত্রের কারখানা প্রভৃতি ছাড়াও সামরিক বাহিনীতে কায়িক পরিশ্রমের জন্য তাদের বিশেষ মর্যাদা ছিল। রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্যই তাদের শ্রমের লাগানো হতো। গ্যালি নামক যুদ্ধ জাহাজ দাসরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে তার জন্য বেঞ্চির সঙ্গে দাসদের পা লেভল দিয়ে বাঁধা থাকতো। কাজে অবহেলা ফলশ্রুতি ছিল চাবুকের মার।

প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা
প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা

দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধের পর রোমের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা যায়। প্রজাতন্ত্র রোম সাম্রাজ্যবাদী রোমে পরিণত হয়। এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য উভয়দিকেই রোমের সম্প্রসারণ ঘটে। বিভিন্ন যুদ্ধে জয়ী রোমের কাছে যুদ্ধবন্দী দাসদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এইসব দাসদের মধ্যে গ্রিস দেশ থেকে আনা দাসদের রোমে বিশেষ চাহিদা ছিল। গ্রিস জয় করার পর রোমেরা সেখানকার শিক্ষিত ও মার্জিত মানুষদের ও বন্দী করে গৃহদাসে পরিণত করে। স্পেন আফ্রিকা ও প্রাচ্যের দাসের কঠোর পরিশ্রমের কাজে নিযুক্ত করা হতো। 

বেশি সংখ্যক দাস আমদানি হওয়াই গ্রামের ভূমিহীন কৃষকরা বিপদের মধ্যে পড়ে। সস্তায় দাস পাওয়া যেত বলে দরিদ্র ভূমিহীন কৃষকরা কাজ পেতো না। বেকার এই সমস্ত রোমানরা রোম নগরীতে এসে ভিড় জমাতে শুরু করে। দেখা দেয় নতুন সমস্যা। গ্রামীণ ভাতৃদ্বয় দাস সংক্রান্ত এই সমস্যার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আর্থসামাজিক এই সমস্যার কোন সমাধান করতে পারেননি। জুলিয়াস সিজার শুধুমাত্র শ্রমিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন যে শেষ চরণে নিযুক্ত শ্রমিকদের মধ্যে অন্তত ⅓ অংশ স্থানীয় বাসিন্দা হতে হবে। এতেও কোন সমাধান হয়নি। 

ক্রীতদাসদের শোষণ করেই রোমানদের ধন সম্পদ ও বিলাসিত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তারা অত্যাচার করেই শান্ত হতো না হিংস পশুর সাথে নিরন্তর দাসদের লড়াই দেখে আনন্দ উপভোগ করতো। প্রাচীন রোমের নাগরিকদের আনন্দ বিধানের জন্য মানুষ ছাড়াও সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক প্রভৃতি হিংস্র জন্তুর যে আসল লড়াই চলত তাতে মল্লযুদ্ধারা ছিল। মল্লযুদ্ধে জয়লাভ করলে দাসত্ব থেকে মুক্তির সম্ভাবনা থাকাই তারা নিজেদের প্রাণকে বাজি রেখেও মল্লযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। এই মল্লযুদ্ধ দেখার জন্য রোমে কলোসিয়াম নামে এক বিশাল রঙ্গমঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল।

এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমেই ঘনীভূত হতে থাকে। এবং তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। 134 খ্রিস্টপূর্ব সিসিলিতে ক্রীতদাসদের প্রথম বিদ্রোহ দেখা দেয়। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইন্নুস। বিভিন্ন স্থানের পলায়াত ক্রীতদাসরা ইন্নুসের সাথে যোগ দেয় ইন্না থেকে এই বিদ্রোহ সমগ্র সিসিলিত ছড়িয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের দমন করার জন্য যে সৈন্যবাহিনী পালানো হয়েছিল তাদের সেনা কয়েকবার দাসেরা পরাজিত করলে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। তবে ক্রীতদাসদের এই বিদ্রোহ অবদমিত হয়। 102 খ্রিস্টপূর্ব সিসিলিতে দাস বিদ্রোহ আবার দেখা দেয়। 73 খ্রিস্টপূর্ব স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে ক্রীতদাসরা বিদ্রোহী হয়। সাধারণ মানের অস্ত্র ছিল বিদ্রোহীদের হাতে। স্পার্টাকাস দু’বছর ইতালিতে আধিপত্য বজায় রাখার পরে 71 খ্রিস্টপূর্ব ক্রীতদাসদের পরাজয় ঘটে। স্পার্টাকাস পরাজিত ও নিহত হন। কিছুদিন বিদ্রোহ চললেও অবশেষে পম্পের সৈন্যদের দ্বারা বিদ্রোহ অবদমিত হয়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *