টীকা লেখ ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স ।
ভূমিকা
বাংলার মুদ্রণশিল্পের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য নাম হল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি (১৮৬৩-১৯১৫ খ্রি.)। সাহিত্যিক, চিত্রকর, প্রকাশক ও সুরকার উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন প্রকৃতপক্ষে বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক। মুদ্রণ শিল্প অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের ভূমিকা লক্ষ করা যায়।
ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স
যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত উপেন্দ্রকিশোরের প্রথম বই ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য তিনি বেশ কিছু ছবিও আঁকেন। বইটি বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু বইটির মুদ্রণ উপেন্দ্রকিশোরকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এরপর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিদেশ থেকে আধুনিক উন্নত মুদ্রণযন্ত্র এনে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কলকাতার শিবনারায়ণ দাস স্ট্রীটে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স। এটি ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স নামে পরিচিত। ছাপাখানার সঙ্গে ছবি আঁকার একটি স্টুডিও খোলেন।
![]() |
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি |
১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ছাপাখানার কাজ ও ছবি এনগ্রেভ করা সম্বন্ধে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর শেখা ও জানা হয়ে গিয়েছিল এবং দক্ষতা ও নিজের ওপরে একটা বিশ্বাস এসেছিল। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি সাহস করে নিজের পয়সায় বিলেত থেকে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে নিজের ছাপাখানার কাজ শুরু করে ছিলেন । এইভাবে সেকালের বিখ্যাত ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্সের উত্থান হয়েছিল ।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স থেকে প্রথম বই ‘টুনটুনির বই’ প্রকাশিত হয় । উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রভৃতি শিশুপাঠ্য গ্রন্থে তিনি হাফটোন ছবির ব্যবহার করেন । ১৩২০ বঙ্গাব্দের ১লা বৈশাখ তাঁর সম্পাদনায় বত্রিশ পৃষ্ঠাসংখ্যার একটি কিশোরপাঠ্য মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ‘ প্রকাশিত হয় । এই ছাপাখানা থেকে উপেন্দ্রকিশোর ছোটোদের জন্য নানা ধরনের বই, ছবির বই প্রভৃতি প্রকাশ করতে থাকলেন। মূলত এই প্রতিষ্ঠান থেকেই ভারতে ‘প্রসেস প্রিন্টিং’ শিল্পের বিকাশ শুরু হয়।
![]() |
সন্দেশ পত্রিকা |
পরবর্তীকালে উপেন্দ্রকিশোরের পুত্র সুকুমার রায় পত্রিকা সম্পাদনার ভার নেন । তারপর একে একে সুবিনয় রায়, সত্যজিৎ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, লীলা মজুমদার, নলিনী দাস, বিজয়া রায়, সন্দীপ রায় প্রমুখ এই পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন । আধুনিক ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে পুত্র সুকুমার রায়কে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠান ।
পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সুকুমার রায় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স -এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । মুদ্রণ বিষয়ে বিলেত থেকে শিক্ষালাভ করে তিনি ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের ব্যবসার কাজ এগিয়ে নিয়ে যান । সুকুমার রায় প্রসেস পদ্ধতিতে ক্যামেরার কাজের সহায়ক স্লাইডিং ক্যালকুলেটর উদ্ভাবন করেন । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ইউ. এন. রায় অ্যান্ড সন্স সংস্থাটির অবলুপ্তি ঘটে।