বার্টান স্টেনের স্টেটমেন্টটরি থিওরি
অয়দান ডব্লিউ সাউথল ছিলেন একজন নৃতত্ত্ববিদ তিনি 1953 খ্রিস্টাব্দে আলুর সোসাইটি এ স্টাডি ইন প্রসেসস এন্ড টাইপস অব উমনেশন নামে একখানি গ্রন্থ লেখেন। ওই গ্রন্থে তিনি যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আফ্রিকার এই উপজাতি আলুর এমন এক একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করেছিল জাতি উপজাতি বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষণ যুক্ত হয়েছিল। উপজাতি সততা ও রাজনৈতিক সত্তা নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। সাউথল দেখেছেন যে অভিযাত্রী উপজাতির মানুষজন অনেকগুলি উপজাতি সমাজের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল অনেক সময় শক্তি প্রয়োগ করতে হয়নি। তিনি সেই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে রাজনৈতিক সংগঠন ছিল বিকেন্দ্রীভূত ঐকবদ্ধ রাষ্ট্র ছিল বিড়ল।
সাউথল কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র ও বিকেন্দ্রীভূত আঞ্চলিক রাষ্ট্রের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন। তিনি কেন্দ্রীভূত ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন। একটি ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র হল একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ একটি সুদক্ষ আমলাতন্ত্র শাসিত রাষ্ট্র। এখানে কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়াভাবে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে বিশেষ ধরনের ক্ষমতা ভোগ করে। এদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বিরোধিতা থাকে অনেক সময় এরা যৌথভাবে কেন্দ্রীয় কতৃত্বের বিরোধিতা করে। সাউথল স্পষ্ট করে এর ব্যাখ্যা দেননি। বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের সঙ্গে কেন্দ্রীভূত ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের সম্পর্ক তিনি পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করেন নি।
তিনি বলেছেন আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ধারণা ছিল তবে সেই সার্বভৌমত্ব অবশ্যই আপেক্ষিক ও সীমিত। কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক রাষ্ট্রপতি বা আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলি যত দূরে যায় ততই এদের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়ে। কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান করলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এর অধীনে থাকতে হয়। একেবারে যারা প্রান্তিক অঞ্চলে বা সীমান্ত অঞ্চলে তারা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থাকে। নামমাত্র তারা কেন্দ্রীয় শক্তির অধীনস্থ থাকে। এধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার থাকে তবে অনেক আঞ্চলিক বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কেন্দ্র ও লক্ষ্য করা যায়। এদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নামমাত্র নিয়ন্ত্রণ থাকে। কেন্দ্রে দক্ষ প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র থাকে, আঞ্চলিক সেগমেন্টারি রাষ্ট্রও ধরনের শাসন কাঠামো থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করে একছত্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের অধিকার। এই অধিকার সর্বদা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ও সীমিত থাকে। বিকেন্দ্রীভূত স্বয়ং শাসিত রাষ্ট্র ক্ষমতা সীমিত ভাবে হলেও ব্যবহার করে। তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের অধিকার বৈধ বলে স্বীকার করা হয়, এই অধীনস্থ রাজ্যগুলির মধ্যে অনেকগুল স্তর লক্ষ্য করা যায়। কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষেত্রে এদের অবস্থা অনেকটা পিরামিডের মতো। প্রত্যেক স্তরের রাষ্ট্রগুলির নিজস্ব ক্ষমতা আছে তবে ক্রমশ এদের ক্ষমতা কমতে থাকে। স্তন যত নিচে নামে ক্ষমতা তত কমে আসে। বলা হয় প্রান্তিক বিকেন্দ্রীভূত রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থারই প্রতিরূপ।
এই বিকেন্দ্রীভূত রাজ্য কেন্দ্র থেকে যত দূরে তর্তইসে স্বাধীন স্বাধীনভাবে সে এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রের প্রতি বস্তা স্হানান্তর করতে পারে। এক পিরামিড ব্যবস্থা থেকে অন্য পিরামিডের চলে যেতে পারে। বিকেন্দ্রীভূত রাজ্য স্থায়ী, অনড়, পরিবর্তনহীন নয়, সর্বদা পরিবর্তনশীল এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত । এইসব বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বাটর স্টেইন আরো কতগুলি বক্তব্য বা যুক্তি যোগ করেছেন। তিনি মনে করেন এরকম প্রান্তিক বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব দু’রকমের বাস্তব রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও আনুষ্ঠানিক সার্বভৌমত্ব। এরকম রাষ্ট্র অনেকগুলি ক্ষমতাকেন্দ্র থাকতে পারে এক স্থানে অনুষ্ঠানাদি হয়, অন্য স্থানে থাকে সার্বভৌম কেন্দ্র অন্যত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থাকে এর আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। স্টেইন মনে করেন কেন্দ্রে যেমন দক্ষ আমলাতন্ত্র থাকে বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রে তার প্রতিরোধ থাকতে পারে সেটাই স্বাভাবিক। বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের গড়ন দু’ভাবে পিরামিডের আকৃতি বিশিষ্ট। কেন্দ্র ও প্রান্তিক রাষ্ট্রের মধ্যে কার সম্পর্ক একই রকমের। দ্বিতীয় যে বিরোধিতা থাকে এমনকি রাষ্ট্রের মধ্যে তারা পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। রাজ্যের মধ্যেকার বিরোধিতা ভারসাম্য রক্ষা করে বিভিন্ন অংশের মধ্যে।
এই সেগমেন্টারি রাষ্ট্রের ধারণাটির মধ্যে অনেক ধরনের রাষ্ট্র রয়েছে। এদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধন হল ক্ষমতার অংশীদারিত্ব । এরা আলুর উপজাতি রাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যযুগের ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের তুলনা করেছেন। সাউথল অনেক রকমের রাষ্ট্রের উল্লেখ করে বলেছেন আলুর ছিল এক ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিচু স্তরে। তিনি মনে করেন এই ধরনের বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ভোগে রাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে ছিল। এদের চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ করা দরকার। সেগমেন্টারি রাষ্ট্রের চরিত্র একটি তাত্ত্বিক মডেল হিসেবে গৃহীত হবার যোগ্য নয় বলে অনেকে মনে করেন। এদিকে আদি মধ্যযুগের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বোঝা যায় না। আদি মধ্যযুগের দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এই মডেল প্রযোজ্য কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখানকার বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে। সাউথল ও স্টেইন কথিত সেগমেন্টারি রাষ্ট্রব্যবস্থার মিল নেই। এই বিকেন্দ্রীভূত আঞ্চলিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বেশি গুরুত্ব দিলে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের ধারণা বা তার গঠন প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে হয়। বিভিন্ন সেগমেন্টারি রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক বা বিভিন্ন বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সাউথল ও স্টেইনের লেখাই পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয় নি। এখানে অনেকখানি অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।