সুফিবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য
সুফিবাদ বা তাসাউক যাকে বিভিন্নভাবে ইসলামী ও ধন্যবাদ ইসলামের অন্তনিহিত রূপ ইসলাম এর অন্তর্গত আধ্যান্তিকতা অদৃশ্য অনুভূতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। তা হলো ইসলামের আধ্যাত্মবাদ , যা নির্দিষ্ট মূল্যবোধ আচার-প্রথা চর্চা মূলনীতি দ্বারা বিশেষায়িত ইসলামের ইতিহাসের খুব প্রাথমিক দিকে শুরু হয়েছিল। এবং এটি ইসলামের আধ্যাত্মিক চর্চার প্রধান অভিব্যক্তি ও কেন্দ্রীয় স্বচ্ছতা কে তুলে ধরে। সুফিবাদের চর্চাকারীদের সুফি বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইসলামে তাসাউকের আরেকটি সমার্থক হারানো হল তাজকিয়া।
ঐতিহাসিকদের মতে সূফীগণ প্রায়শই বিভিন্ন তারিকা বা ধারার অনুসারী এমন কিছু ধর্মসভা যা কোন মহান শিক্ষাগুরু কে কেন্দ্র করে গঠিত যাদের ওয়ালি বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং তারা অনুসরণকারীদের সঙ্গে ইসলামী নবী মুহাম্মদ এর সরাসরি সংযোগ বা সিলসিলা স্থাপন করেন।
এই তালিকা গুলি জাওয়াবিয়া, খানকা বা তেক্বে নামক কোন নির্দিষ্ট স্থানে মজলিস নামক আধ্যাত্মিক বৈঠকে মিলিত হয়। তারা ইহসনের জন্য সংগ্রাম করে যায় একটি হাদীসে বিস্তারিত বর্নিত আছে। ইহসন হল এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা যে তুমি তাকে দেখেছ অথবা তুমি তাকে না দেখলেও নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন। সুফিবাদ মোহাম্মদকে আল-ইনসান, আল কমিল (প্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহর নৈতিক তাকে পরিপূর্ণ রূপে ব্যাখ্যা করেছেন ) বলে আখ্যায়িত করে থাকে। এবং তাকে নেতা ও প্রধান আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখে।
সকল সূফি তরিকা মুহাম্মদ এর কাছে থেকে পাওয়া তাদের অধিকাংশ অনুসরণ তার চাচাত ভাই ও জামাতা আলীর বরাতে গ্রহণ করে থাকে এবং তাদের উল্লেখযোগ্য আলাদা ও বিশেষ ব্যক্তি মনে করে।
যদিও প্রাচীন ও আধুনিক সুফিদের সিংহ ভাগই ছিল সুন্নি ইসলামের অনুসারী। মধ্যযুগের শেষ ভাগে শিয়া ইসলাম পন্ডিত মহলে ভেতরেও কিছু সুফি ধারণার বিকাশ ঘটে। যদিও সুফিগণ কট্টর রীতিনীতির বিরোধী তারপরও তারা ইসলামী আইন কঠোরভাবে মেনে চলে এবং তারা ইসলামী ফিকহ ও ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন ধারার অন্তর্ভুক্ত।
সুফিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সন্ন্যাসবাদ বিশেষত জিকির নামক আল্লাহকে স্মরণ এর চর্চার সাথে তাদের ঐকান্তিক সম্পর্ক যা তারা প্রায় সময়ই সালাতের পর করে থাকে। প্রারম্ভিক ও উমাইয়া খিলাফতের জাগতিক দুর্বলতা বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তারা মুসলমানের মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য হারে অনুসারী লাভ করে। এবং এক সহস্র বছর সময়ের মধ্যে বহু মহাদেশ ও সংস্কৃতিতে তারা বিস্তার লাভ করে। প্রাথমিকভাবে আরবি ভাষায় এবং পরবর্তী তুর্কি ও উর্দু ভাষায় অন্যান্যদের মাঝে তাদের বিশ্বাসের প্রচার ও প্রসার করে সুফিগণ তাদের ধর্ম প্রচার ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উইলিয়াম-চেট্টিকের মতে, বিস্মিত পরিসর হতে দেখলে সুফিবাদকে ইসলামী বিশ্বাস ও চর্চার অনন্দ সজ্জা ও প্রসরতার কার্যক্রম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
আধুনিক সময়ে সূফি তরিকা গুলোর সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়া এবং সুফিবাদের কিছু দিক নিয়ে আধুনিক বাদী চিন্তাবিদ ও রক্ষণশীল সালাফিবাদীদের সমালোচনা সত্ত্বেও সুফিবাদ ইসলামী বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এবং পাশাপাশি পাশ্চাত্যের আধ্যাত্মিকতার বিভিন্ন রূপকে ও প্রভাবিত করেছে।