StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চায় স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর



ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চায় স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর 



  ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার উদ্ভব ও বিবর্তনের পথে এক দিকপাল হলেন স্যার আলেকজাণ্ডার কানিংহাম – ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে তিনিই ভারতে প্রথম ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও চর্চাকে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিগত রূপ প্রদান করেন। তিনিই প্রথম সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে এক ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান, প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সৌধগুলির প্রত্নতাত্ত্বিক বিবরণ তৈরি এবং সেগুলিকে সংরক্ষণের উপর জোর দেন। 




  ১৮৬১-এর নভেম্বর মাসে তিনি বড়লাট ক্যানিংকে একটি চিঠিতে লেখেন যে ভারতের ব্রিটিশ সরকার এই দেশের ঐতিহ্যবাহী সৌধগুলিকে রক্ষা করার বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকাই গ্রহণ করেনি। পাশাপাশি তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই সৌধগুলি কালের অমোঘ নিয়মে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং এই সৌহগুলির যথাযথ প্রত্নতাত্ত্বিক বিবরণ বা ম তৈরি অত্যন্ত জরুরি। কানিংহামের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ক্যানিং সিদ্ধান্তে নেন যে উলা ভারতের ঐতিহাসিক সৌধগুলিকে অনুসন্ধান করে সেগুলিকে যথাযথ প্রত্নতাত্ত্বিক দ্ধিতিতে লিপিবদ্ধ করা হবে এবং এই কাজ আলেকজান্ডার কানিংহামের উপর নাস্ত হবে। কানিংহামের মাসিক মাহিনা হবে ৪৫০ টাকা, এছাড়াও তিনি ২৫০ টাকার “field allowance” পাবেন। তবে ক্যানিং-এর এই প্রকল্পে সৌধগুলির সংরক্ষণের বিষয়ে কোনো সদর্থক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি–সরকার ওই সময় সৌধ সংরক্ষণের বিষয়ে অর্থ খরচ করতে রাজি ছিল না। তবে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে সরকার একটি আইন করে (Act X) ঘোষণা করে যে সরকার স্থাপত্যা এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে ঐতিহ্যবাদী সৌধগুলিকে যে কোনো আঘাত থেকে রক্ষা করবে।



 ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১লা ডিসেম্বর কানিংহাম “Archaeological Surveyor রূপে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং জেমস প্রিন্সেপ এর কাছ থেকে লাভ করা শিক্ষার ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তাঁর অনুসন্ধান শুরু করেন। এক্ষেত্রে কানিংহাম ফা হিয়েন এবং বিশেষত হিউয়েন সাঙ প্রদত্ত ভারত ভ্রমণ সম্পর্কিত বিবরণ এবং বৃত্তান্তের উপর নির্ভর করেন। 




 ১৮৬২ থেকে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কানিংহাম ব্যাপক ভ্রমণ ও অনুসন্ধান চালিয়ে একে একে বোধগয়া, বরাবর পর্বতের অশোকের সময়কালের গুহা, কনো, কলসি, মথুরা, দিল্লী, তক্ষশিলা, মানিকিয়ালা, সিরহিন্দ, থানেশ্বর, ধামনার গুহাকে। আবিষ্কার বা সনাক্ত করেন। তবে কানিংহাম বা তার সহযোগীগণ প্রাগৈতিহাসিক কোনো কেন্দ্র আবিষ্কারে ব্রতী হন নি। তবে এই সময় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলপথের আধিকারিক এইচ পি লে মেসুরিয়ার তোসনি নদীর উপত্যকায় নব্যপ্রস্তর সংস্কৃতির সন্ধান পান এবং জিওলজিক্যাল সার্ভের রবার্ট ব্রুস ফোটে মাদ্রাজের দক্ষিণে পল্লভরম এবং কোর্টলিয়ার, আট্টপাঝাম নয়নাভারামে পুরাতন প্রস্তরযুগীয় নিদর্শন আবিষ্কার করেন।



  উত্তর আর্কট জেলায় এবং গোদাবরী উপত্যকায় ফসিলের অবশেষ খুঁজে পান যথাক্রমে সি এফ গুলাম এবং এ বি ওয়নে। ফোটে নিজে মাদ্রাজ সন্নিহিত অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রাগৈতিহাসিক মৃৎপাত্র আবিষ্কার করেন এবং সেগুলিকে কালানুক্রমিক ভিত্তিতে দেখার চেষ্টা করেন। ফোটের এই প্রয়াস ভবিষ্যত প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার পক্ষে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।



 প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে কানিংহামের প্রয়াস প্রথম ভারত সচিব চার্লস উড দ্বারা প্রশংসিত হলেও লর্ড লরেন্স পরিচালিত ব্রিটিশ সরকার প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চায় উৎসাহ দেওয়া বন্ধ করে এবং কানিংহামও ইংল্যাণ্ডে ফিরে যান। এই সময় ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চা সংক্রান্ত ক্রিয়াকর্ম মূলত সরকারি চিঠিপত্র ও নির্দেশনামার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। 




  ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে আগস্ট একটি নির্দেশনামা জারি করে ব্রিটিশ ভারতের সরকার আঞ্চলিক সরকারগুলিকে স্ব স্ব এলাকায় ঐতিহাসিক সৌধ ও ভবনের চিত্রসহ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয় যদিও এই প্রকল্প খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর ঠিক হয় যে প্রাক্ ঔপনিবেশিক ভারতের স্থাপত্যকে বোঝার জন্য প্রাচীন সৌধগুলির ঢালাই করা ছাঁচ বা প্রতিরূপ নির্মাণ করা হবে এর জন্য ৫২০০০ টাকা ধার্য করা হয়। তবে একমাত্র বোম্বে প্রেসিডেন্সি অঞ্চলে সাইকস ও বার্জেস এর চেষ্টায় প্রাচীন সৌধের কিছু ভালো ছবি, ছাঁচ এবং প্ল্যান তৈরি হয়েছিল। এইচ এইচ কোলে, যিনি উত্তরের প্রদেশগুলির দায়িত্বে ছিলেন, সাঁচী স্তূপের প্রবেশদ্বারের একটি বিশাল ছাঁচ বা মডেল তৈরি করেছিলেন। এই প্রকল্পের মধ্যে কাজ করে রাজেন্দ্র লাল মিত্র উড়িষ্যার উপর চমৎকার দুই খণ্ডে “Antiquities of Orissa” লিখেছিলেন।



মূল্যায়ন:

  ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চায় স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের অবদান অনস্বীকার্য। প্রায় সমসাময়িক কালে স্বরাষ্ট্র সচিব ইসি বেইলি, ভারত সচিব ডিউক অফ অ্যারগিল ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং একটি স্বতন্ত্র প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ স্থাপনের সুপারিশ করেন।




Share

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *