রেডিও কার্বন ডেটিং / কার্বন -১৪ পদ্ধতি কি
প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে প্রাপ্ত কোন পুরাবস্তুর প্রাচীনত্ব বা কাল বা তারিখ নির্ধারণেঙর ক্ষেত্রে একাধিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে এখন অবলম্বন করা হয় এর মধ্যে কার্বন -১৪ বা রেডিও কার্বন পদ্ধতি, থার্মোলুমিনিসেন্স (মৃৎপাত্রের উপর ব্যবহৃত), পটাসিয়াম আর্গন (পুরাবস্তুর উপর প্রয়োগ করে ৫০০ কোটি থেকে ১ লক্ষ বছর আগেকার কাল নির্ধারণ সম্ভব), ইলেকট্রন স্পিন রেসোনেন্স (ইলেকট্রন স্পিন রেসোনেন্স, পটাশিয়াম আরগন ইত্যাদি।
পদ্ধতিগুলি মূলত ভূতাত্ত্বিক, পুরাবিদগণ জীবাশ্মের তারিখ বা সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন ইথিওপিয়ার আয়াসের অন্তর্ভূক্ত হার্তোতে প্রাপ্ত হোমিনিড জীবাশ্মের তারিখ পটাশিয়াম আরান পদ্ধতিতে ১৬০০০০ ১৫৪০০০ বছর পূর্বে নির্ধারিত হয়েছে, কর্নাটকের ইসামপুরে প্রাপ্ত দাঁতের জীবাশ্মের উপর ইলেকট্রন স্পিন রেসোনেন্স প্রয়োগ করে সময় নির্ধারিত হয়েছে ১৩-১২ লক্ষ বছর পূর্বে), ইউরেনিয়াম সিরিজ, ফিশন ট্র্যাকিং (পাথরের মধ্যে খনিজ সম্পদের প্রাচীনত্ব নির্ধারণ), প্যালিওম্যাগনেটিক ডেটিং (চৌম্বকীয় স্তর নির্ধারণ), অ্যামিনো অ্যাসিড বিশ্লেষণ, দেহাবশেষের ও পুরাবস্তুর উপর ফ্লুরিন গ্যাসের ব্যবহার, ডেনড্রোফোনোলজি বা টি রিং ডেটিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য; যদিও ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় রেডিও কার্বন ডেটিং এবং সামান্য পরিমাণে থার্মোলুমিনিসেন্স ও ডেনড্রোক্রোনোলজি। এখানে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাল নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদত্ত হল।
রেডিওকার্বন
মার্কিনী রসায়নবিদ উইলার্ড লিব্বি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে রেডিওকার্বন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তার পর থেকেই এই পদ্ধতি পুরাবস্তুর তারিখ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রেডিওকার্বন বা কার্বন-১৪ এমন এক ধরণের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ যা সকল জীবন্ত বস্তুর মধ্যে বিদ্যমান, সালকসংশ্লেষের সময় পরিবেশ থেকে উদ্ভিদ এই কার্বন ১৪ গ্রহণ করে।
উদ্ভিদ ভক্ষণকারী প্রাণীজগতের দেহেও এই কার্বন-১৪ সঞ্চারিত হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ হয় কাঠকয়লা, কাঠ, বীজ, জৈব অবশেষ বা অস্থি এবং উদ্ভিজ্জ অবশেষের উপর এবং প্রায় ৮০ হাজার বছর আগে পর্যন্ত সময়কাল নির্ধারণ করা যায়। কার্বন ১৪ নামক এই তেজস্ক্রীয় আইসোটোপটি সমান হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, কিন্তু বস্তুর জীবদ্দশায় কার্বন ১৪ র ক্ষয়ের পরিমাণ বাতাস থেকে আহত কার্বন-১৪ দ্বারা পূরণ হয়ে যায়।
বস্তুর মৃত্যুর পর ক্ষয়প্রাপ্ত কার্বন-১৪ আর বাতাস থেকে পূরণ করা যায়না। যেহেতু কার্বন-১৪ সমান হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সেহেতু পুরাবস্তুর কার্বন-১৪ কতখানি হ্রাস পেয়েছে তা মেপে সেই বস্তুর প্রাচীনত্ব নির্ধারণ করা যায়। মৃত্যুর পু প্রতি ৫৭৩০ বছরের অর্ধেক সময়ে কার্বন-১৪ আইসোটোপটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এইভাবে মাটির তলায় প্রাপ্ত জীব বা উদ্ভিদের দেহে অবশিষ্ট কার্বন-১৪’র পরিমাণ নির্ধারণ করে বিজ্ঞানীরা বলে দিতে পারেন যে প্রাণী বা উদ্ভিদটি কবে নাগাদ মারা গিয়েছিল এবং এর দ্বারা বলা যায় যে সংশ্লিষ্ট প্রাণী/ উদ্ভিদ বা বস্তুটির বয়স কত।
কার্বন-১৪ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়কাল সম্পূর্ণ সঠিক হয় না। আগে পরে ১০০ বছরের (+১০০) ব্যবধানকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। অধুনা অনেক পুরাবিদই রেডিওকার্বন অপেক্ষা ডেনড্রোজ়োনোলজি এবং থার্মোলুমিনিসেন্স পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তারিখকে অধিক গুরুত্ব দেন।