নারী শিক্ষা বিস্তারে দেশীয় উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই খ্রিশ্চান মিশনারীদের পাশাপাশি নারীশিক্ষার প্রসারে দেশীয় উদ্যোগ ও সচেতনতাও লক্ষ্যণীয়। বস্তুত সমসাময়িক ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য নানা উদ্যোগ ও জনমত গঠনের প্রয়াস চোখে পড়ে।
রাজা রামমোহন রায় স্ত্রীশিক্ষার সমর্থনে লেখেন, “স্ত্রীলোকদিগের বুদ্ধির পরীক্ষা কোনও কালে লইয়াছেন যে তাহাদিগকে অল্পবুদ্ধি কহেন? আপনারা বিদ্যাশিক্ষা, জ্ঞানশিক্ষা, স্ত্রীলোককে প্রায়ই দেন নাই, তবে তাহারাবুদ্ধিহীন হয়, ইহা কিরূপে নিশ্চয় করেন?” হিন্দু পাওনিয়ার পত্রিকার একটি প্রবন্ধে লেখা হয় যে “নারীর যাবতীয় সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার প্রয়োজন, পুরুষের ক্রীড়ানক না ভেবে যোগ্যতার বিকাশের ক্ষেত্র করে দিতে হবে।”
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ সমাচার দর্পণে ‘চুঁচুড়া নিবাসী স্ত্রীগণস্য’ নামে একটি পত্র প্রকাশিত হয়-পত্রটি কে বা কারা লিখেছিলেন তা জানা না গেলেও লেখাটি অত্যন্ত সাহসী, সুচিন্তিত ভাবে লেখা ও যুগোপযোগী। এই পত্রের প্রথম দাবিটি ছিল এই যে বিশ্বের অন্যান্য সভ্য দেশের নাআারীদের মতো তাদেরও বিদ্যা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়াও নারীদের সামাজিক মেলামেশা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ইত্যাদির দাবিও পেশ করা হয়েছিল এবং বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও পণপ্রথা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছিল।
১৮৪৫ সালে জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় কর্তৃক উত্তরপাড়ায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়াস সরকারী নির্লিপ্ততার কারণে সম্ভব না হলেও ১৮৪৭ সালে কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র প্যারীচরণ সরকারের সহযোগিতায় বারাসতে অবৈতনিক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
মাদ্রাজে থিওসফিক্যাল সোসাইটির নেত্রী অ্যানি বেসান্ত ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ‘Indian Ladies Magazine এ নারী শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করে Education of Women’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে তিনি মত দেন যে পশ্চিমী কায়দায় নয়, ভারতীয় আদর্শ অনুসরণ করেই এদেশের নারীদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
অন্যদিকে উত্তর ভারতে আর্য সমাজের প্রগতিশীল সংস্কারকগণ নারী শিক্ষার বিস্তারে সচেষ্ট হন জলন্ধর সমাজ ১৮৯০ সালে আর্য কন্যা পাঠশালা স্থাপন করে একজন মহিলা প্রিন্সিপ্যাল নিয়োগ করে। এর কিছু পরেই লালা দেবরাজের উদ্যোগে স্থাপিত হয় জলঞ্চর কন্যা মহাবিদ্যালয় এই কলেজটি তিনি প্রথমে নিজের পৈত্রিক বাড়িতে স্থাপন করেছিলেন এবং মায়ের রান্নাথেকে ছাত্রীদের খাবার সরবরাহ করতেন।