কে কবে কোথা থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের ভাষাকে সন্ধ্যা ভাষা বলা হয় কেন।
চর্যাপদ দশম-দ্বাদশ শতাব্দীতে লেখা। বাংলা ভাষায় লেখা প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদ। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজদরবার থেকে পুথিটি আবিষ্কার করেন। পুথিটি প্রাচীন বাংলা ও নেপালি অক্ষরে লিখিত। আর এর ভাষা ছিল রহস্যময়।
চর্যাপদের ভাষাতত্ত্ব আলোচনা করে অনেক পণ্ডিত এর রচনাকাল দশম-দ্বাদশ শতাব্দী বলেই মনে করেন। চর্যাপদের প্রথম পদকর্তা লুইপাদ দশম শতাব্দীতে বর্তমান ছিলেন বলে দশম শতাব্দী থেকেই এই পদসমূহের রচনা ও সংকলন কার্য চলতে থাকে। এর ভাষা দেখেও মনে হয়, খ্রিঃ দশম শতাব্দীর দিকে বা তার সামান্য পূর্বে যখন মাগধী অপভ্রংশের খোলস ছেড়ে বাংলাভাষা সবেমাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। তখন সেই অপরিণত ভাষায় সিদ্ধাচার্যগণ পদগুলি রচনা করেছিলেন।
এ ভাষার মূল বুনিয়াদ মাগধী অপভ্রংশ থেকে জাত প্রাচীনতম বাংলা ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত। পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দেরও আদিম নিদর্শনও এই চর্যাপদে দুর্লভ নয়। এইজন্য ভাষা ও ছন্দের দিক দিয়ে চর্যাপদ বাংলার নিকটতম যদিও এতে প্রত্যন্ত প্রদেশের শব্দও আছে।
কিছুটা দুর্বোধ্য রহস্যময় ভাষায় এই পদগুলি রচিত হয়েছে। এই হেঁয়ালি ভাষার নাম ‘সন্ধ্যাভাষা’ যার অর্থ, যে ভাষা রহস্যময় এবং যা বুঝতে বিলম্ব হয় অথবা যার অর্থ সম্যক ধ্যানের দ্বারা বুঝতে হয়, তা ‘সন্ধ্যাভাষা’ বা ‘সন্ধাভাষা’। ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চিয়-এ যুক্ত মুনি দত্তের সংস্কৃত টীকাটি না থাকলে চর্যাপদের তাৎপর্য চিরদিন দুর্বোধ্যই থাকত। অন্য সম্প্রদায়ের প্রতিকূল ব্যক্তি বা গোঁড়া ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়, যাঁরা সহজিয়া বৌদ্ধদের প্রতি প্রসন্ন ছিলেন না তাঁদের শ্যেনচক্ষু থেকে এই গূঢ় ধর্মচারণ আড়াল করে রাখার জন্যই বৌদ্ধ তান্ত্রিক সিদ্ধাচার্যেরা এই রকম ‘সন্ধ্যাভাষা’র ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।