StudyMamu

Site is under construction some pages not work properly. Please bear with us.

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের কেন বলা হয় । শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের কেন বলা হয় । শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের কেন বলা হয় । 

 শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোসুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড-এর প্রচেষ্টায় বাংলা এবং ভারতে গণশিক্ষা প্রসারের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয় তাদের অসামান্য সৃজনশীল অবদানের জন্য এই তিনজন ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত। তাঁদের উদ্যোগে বাংলায় স্কুলপাঠ্য প্রচুর বই সাধারণ মানুষের হাতে কম দামে পৌঁছে দেওয়া হয়।


শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ীর অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।


ভূমিকা:

   উইলিয়াম কেরি 1793 খ্রিস্টাব্দে ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটির প্রতিনিধি হিসেবে ভারতবর্ষে আসেন। 1799 খ্রিস্টাব্দে আসেন মার্শম্যান এবং ওয়ার্ড। মার্শম্যান ছিলেন একজন যোগ্য শিক্ষক, আর ওয়ার্ড ছিলেন মুদ্রণ পারদর্শী। এঁদের চিন্তনে-মননে ছিল যথার্থ মূল্যবোধ ।

   এঁদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের এলাকায় এই প্রচারে অনুমতি দেয়নি। তাই তাঁরা ডেনমার্ক অধিকৃত শ্রীরামপুর যান। সেটা ছিল 1799 খ্রিস্টাব্দ। তাঁরা শ্রীরামপুর দিনেমার কুঠির আশ্রয়ে থেকে বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রসার, পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার, সমাজসংস্কার প্রভৃতি কার্যে ব্যাপৃত হন। তাঁদের কর্মকেন্দ্রের প্রধান কেন্দ্র ছিল শ্রীরামপুর, যা শ্রীরামপুর মিশন নামে খ্যাত।

ধর্ম প্রচার ও বিদ্যালয় স্থাপন:

    ধর্মপ্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা শিক্ষাবিস্তারেও মনোনিবেশ করেছিলেন। 1815 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কয়েকটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তৎকালীন সমাজে নারীদের প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁরা বেশ কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় তিস্থাপন করেছিলেন, এর সংখ্যা ছিল 31টি। বিদ্যালয়গুলিতে সুষ্ঠু পঠনপাঠনের জন্য তাঁরা যথোপযোগী। পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেছিলেন।

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা:

       1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ত্রয়ী, শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলে বাংলা ভাষার সুসংহত বিকাশ ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়েছিল।উইলিয়াম কেরি, 1801 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বাইবেলের (New Testament) বঙ্গানুবাদ বের করেছিলেন। প্রকাশ করেছিলেন, ‘বাংলা ব্যাকরণ’; আশি হাজার শব্দবিশিষ্ট চারখণ্ডের ‘ইঙ্গবঙ্গ’ অভিধান। তা ছাড়া তাঁর অন্যান্য রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কথ্যভাষায় লিখিত গ্রন্থাবলি— তাল: কথোপকথন’, ‘ইতিহাসমালা’, ‘বিদ্যাহারাবলী’ প্রভৃতি।

সুপরিকল্পিত পাঠক্রম: 

     শ্রীরামপুর মিশন থেকে যে সমস্ত পাঠ্যপুস্তক বের করা হয়েছিল, সেগুলির সুপরিকল্পিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্তিতে ছিল—[1] দেশীয় ভাষার ব্যাকরণ, [2] প্রাথমিক গণনা ও গণিত, [3] জ্যোতির্বিদ্যা, [4] প্রাথমিক ভূগোল [5] ইতিহাস, [6] প্রাথমিক বিজ্ঞান, [7] নীতিশিক্ষা।

ইংরেজি ভাষার প্রসার:

   ‘শ্রীরামপুর এয়ী বাংলা ভাষার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। 1807 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর জয়ী ‘Address to Hindus & Mohammedans’ নামে যে পুস্তিকা বের করেছিলেন, তাতে ছিল হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের প্রতি কটাক্ষ, যা ছিল কোম্পানির তৎকালীন ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির বিরুদ্ধ। 

  তাই রক্ষণশীল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষের দানা জমাট বাঁধে, এদের মধ্যে দেখা দেয় অস্থিরতা, দ্বিধা, ভয়, সন্দেহ প্রভৃতি। যার ফলে কোম্পানি শ্রীরামপুরের ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করে। এ ছাড়া ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে 1818 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর প্রয়ীর উদ্যেগে ভারতে প্রথম ইংরেজি মিশনারি কলেজ—’শ্রীরামপুর কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। আজও শ্রীরামপুর কলেজ ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’র চিরস্মরণীয় অবদানের স্মৃতি বহন করে চলেছে।

ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন :

 ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকল্পে Calcutta Benevolent Institution এবং শ্রীরামপুরে একটি  Boarding School প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকে, তাঁরা। এর 5 বছরের মধ্যে আরও 50টির বেশি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা: 

 শ্রীরামপুর জয়ীর প্রচেষ্টায় ‘দিগদর্শন’ নামে একটি সাময়িক পত্রিকা এবং 1818 খ্রিস্টাব্দে ‘সমাচার দর্পণ’ নামে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। ‘সমাচার দর্পণ’ সমকালীন বাংলা ভাষা, সাহিত্য, লোকাচার, লোকনীতি, সামাজিক মূল্যবোধ প্রভৃতির উন্নতিসাধনে ব্রতী হয়েছিল। তাই আধুনিক সংবাদপত্রের ইতিহাসে শ্রীরামপুর এয়ীর স্থান অবিস্মরণীয়। তা ছাড়া তাঁদেরই অবদানে স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছিল।

মূল্যায়ন: 

  বাংলা ভাষার উত্তরণের ক্ষেত্রে ‘শ্রীরামপুর এয়ী’ র অবদান বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে প্রশ্নাতীত। বাংলা ভাষাকে ফারসি, উর্দু, সংস্কৃত ভাষার প্রভাবমুক্ত করার ক্ষেত্রে ‘শ্রীরামপুর এয়ী’ এর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে বা থাকবে। বলা যেতে পারে যে, বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রকৃত ভাবপ্রকাশের শৈলী, ‘শ্রীরামপুর জয়ী’-র হাত ধরেই বিকাশ লাভ করেছিল। জনগণকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে তাঁরা অনেকগুলো শিক্ষালয় গড়ে তুলেছিলেন। দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম বাহক ও সঞ্চালক ছিলেন ‘শ্রীরামপুর জয়ী। 

  ইংরেজি শিক্ষার প্রসারকল্পে Calcutta Benevolent Institution-সহ বেশ কয়েকটি ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। এদেশে প্রথম ছাপাখানা স্থাপন, মুদ্রণের জন্য বাংলা হরফ গঠন প্রভৃতি তাঁদেরই অকৃপপ দানের ফসল  ‘শ্রীরামপুর জয়ী’-র দানে বাংলা এবং অন্যান্য দেশীয় ভাষায় পত্রপত্রিকা প্রকাশনার শুভারম্ভ ঘটেছিল। তাঁদেরই দানে 1818 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’। বিজ্ঞানশিক্ষা ও জনশিক্ষার প্রসার, স্ত্রীশিক্ষার প্রবর্তন, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান এবং সমাজসংস্কারের বিবিধক্ষেত্রে শ্রীরামপুর প্রয়ীর দান ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top